সারাদেশে বিক্ষিপ্ত সহিংসতার মধ্য দিয়ে শেষ হলো পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। বুধবার (৫ জানুয়ারি) চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া আর মানিকগঞ্জে প্রাণ গেছে ৭ জনের। অনেক জায়গাতেই দুই প্রার্থীর সমর্থকরা জড়ায় সংঘাতে। শরীয়তপুরে পুড়িয়ে দেয়া হয় গণমাধ্যম কর্মীদের মোটরসাইকেল। কোথাও কোথাও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অ্যাকশনেও যেতে হয় পুলিশকে। তবে সাত শতাধিক ইউনিয়নের বেশিরভাগেই ছিল শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। দিনভর ভোট হয় উৎসবের আমেজে।
ইউপি নির্বাচনে আগের ধাপগুলোতে সহিংসতার ঘটনার পর এই ধাপে বাড়তি সতর্ক ছিলো আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী। কিন্তু তাদের কঠোর অবস্থান সত্বেও থামানো যায়নি সহিংসতা-প্রাণহানি।
বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর ও দৌলতপুরের বিভিন্নি ইউনিয়নে। বাঁচামারা ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রে দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের মাঝে পরে মারা যান এক নারী ভোটার।
ভোটগ্রহণ ঘিরে সংঘর্ষ হয়েছে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, বোয়ালখালী ও আনোয়ারার কয়েকটি ইউনিয়নে। আনোয়ারার চাতুরী ইউনিয়নের দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষে প্রাণ গেছে এক যুবকের।
গাইবান্ধার সাঘাটার জুম্মারবাড়ি ইউনিয়নে একটি ভোটকেন্দ্রের বাইরে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের হামলায় আবু তাহের নামে এক ব্যক্তি নিহত হন। ভোটগ্রহণ ঘিরে সংঘর্ষে চাঁদপুরের হাইমচরে প্রাণ গেছে আরও ১ জনের। এছাড়া, নওগার পত্মীতলায় ভোট গণনার সময় পুলিশের সাথে সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছে।
শরীয়তপুরের নড়িয়ার ভোজেশ্বর ইউনিয়নে একটি কেন্দ্র দখলে নিতে হামলা চালায় চশমা মার্কার চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন বেপারীর সমর্থকরা। এসময় একের পর এক বোমার বিস্ফোরণে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অবরূদ্ধ হয়ে পড়েন সাংবাদিক ও আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এক পর্যায়ে ভোটকেন্দ্রে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
জামালপুরের বকশিগঞ্জের মেরুরচর ইউনিয়নে উশৃঙ্খল সমর্থকরা আগুন ধরিয়ে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর গাড়িতে। সেখানকার একটি কেন্দ্রে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মাঝে সংঘর্ষের সময় ঘটে এই ঘটনা। শেষ পর্যন্ত ফাঁকা গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।
রাজশাহীর পুঠিয়া, দুর্গাপুর ও বাগমারা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ ঘিরে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়। এসময় আহত হন বেশ কয়েকজন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের বাসুদেব ইউনিয়নে একটি কেন্দ্রে সংঘর্ষে জড়ায় দুই মেম্বার প্রার্থীর সমর্থকরা। এতে আহত হন অন্তত ১০ জন।
এছাড়া গাজীপুর, কুমিল্লা, নরসিংদীসহ আরও কয়েকটি জায়গায় ভোটগ্রহণ ঘিরে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়। আহত হন অনেকে। সংঘর্ষের পাশাপাশি জালভোট দেয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগও ওঠে।
সিলেটের জকিগঞ্জে রিটার্নিং কর্মকর্তা আরিফুল হক ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সালমান সাকিবকে সিলমারা ব্যালট পেপারসহ আটক করেছে পুলিশ। বাতিল ঘোষণা করা হয় কাজলসার ইউনিয়নের ভোট।
তবে দিনের শুরুটা ভালো ছিল। তীব্র শীত উপেক্ষা করে বিভিন্ন ইউনিয়নের ভোটকেন্দ্রগুলোতে দেখা যায় ভোটারদের লম্বা লাইন। বিশেষত নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দিতে পেরে সন্তোষ জানান অনেকেই।
জেডআই/
Leave a reply