রক্ষণশীল আফগানিস্তানে অনেক পরিবারে মেয়ে শিশুদের বড় করা হয় ছেলে সাজিয়ে। আফগান সমাজের এই প্রথাকে বলা হয় ‘বাছা পোষ’। মূলত দরিদ্র পরিবারগুলো অভাবের সংসারে আয়-রোজগার বাড়াতেই এমনটা করে থাকে। আবার কেউ কেউ এমন প্রথা বেছে নেয় কুসংস্কার থেকে। তাদের ধারণা এমনটা করলে পরের সন্তানটি হবে ছেলে।
আফগানিস্তানে পরিবারের বোঝা হিসেবে দেখা হয় মেয়েদের। আর ছেলেরা হয় পরিবারের গর্ব। তাই যাদের ছেলেসন্তান নেই তারা অনেকেই অনুসরণ করে ‘বাছা পোষ’ প্রথা। এমন চল কবে কীভাবে শুরু হয়েছে জানা যায়নি। তবে এই ‘বাছা পোষ’ প্রথা ঘিরে আছে নানা কুসংস্কার। কারো কারো বিশ্বাস, এমনটা করলে পরবর্তী সন্তানটি ছেলে হবে। তবে বেশিরভাগই মেয়েকে ছেলে সাজানো আসলে কাজে পাঠানোর জন্য, যাতে কিছুটাই হলেও মেটে অভাব।
এমনটি ‘বাছা পোষ’ প্রথার শিকার কন্যা শিশু সানম। তার মা বলেন, আফগান সমাজে অনেকেই বিশেষ করে গরিবরা বাধ্য হয়ে এমনটা করে। আমাদের কোনো ছেলে নেই, যে বাইরের কাজগুলো করতে পারবে। বাবাকে আয় রোজগারে সাহায্য করতে পারবে। আল্লাহ সাক্ষী। আমাদের আর কোনো উপায় নেই। তালেবান সরকার যদি আমাদের প্রয়োজনগুলো মিটিয়ে দেয়, ওকে সাধারণ মেয়ে শিশুর মতোই বড় করবো।
এদিকে ছেলে হিসেবে জীবনযাপন উপভোগই করে সানম। কারণ অন্য বোনদের মতো ঘরবন্দি থাকতে হয় না তাকে। বড় হয়ে ডাক্তার, কমান্ডার অথবা সেনাসদস্য হতে চায় সে।
কৈশোরে প্রবেশের পরই ছেলে থেকে আবারও মেয়ে হয়ে উঠতে হয় বাছা পোষদের। তবে এই পরিবর্তনটা অনেকেই মেনে নিতে পারে না। তেমনই একজন নাজিয়া। সাত বোনের একজন হওয়ায় শৈশবে তাকে ‘বাছা পোষ’র ভূমিকা পালন করতে হয়। আসাদুল্লাহ নামে বড় হওয়া নাজিয়ার জগতটা হঠাৎই বদলে যায় একদিন। ফিরিয়ে নেয়া হয় অন্দরে।
এনিয়ে নাজিয়া বলেন, বাচ্চাদের স্কুলে পড়াতাম। সেটা বন্ধ করে দিয়েছে তালেবান। এদেশে ছেলেদের মূল্য বেশি। তাদের কোনো কাজে বাধা নেই। কিন্তু মেয়েদের জন্য সব নিষিদ্ধ।
বাছা পোষ রীতিকে কীভাবে দেখবে নতুন তালেবান সরকার, তা স্পষ্ট নয় এখনও। আগেরবারের তুলনায় উদারনীতির কথা বললেও ক্ষমতা গ্রহণের পর নারীদের কাজের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। অনেক অঞ্চলে হাইস্কুলেও যেতে দেয়া হচ্ছে না মেয়েদের।
এসজেড/
Leave a reply