প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে জানার পরেও দেয়া হয়েছে পরীক্ষার ফলাফল। প্রতিরক্ষা মহা হিসাব নিরীক্ষক কার্যালয়ের অডিটর নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির অভিযোগে ১০ জনকে আটকের পর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ফাঁস হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। এ বিষয়ে প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষককে জানিয়েছে পুলিশ। ফাঁসচক্রের হোতা রেলওয়ের এক কর্মকর্তা, সাবেক সেনা সদস্য ও একজন জনপ্রতিনিধি।
প্রতিরক্ষা মহাহিসাব নিরীক্ষক কার্যালয়ের নিরীক্ষক বা অডিটর নিয়োগ পরীক্ষা হয় শুক্রবার। বিকেল ৩টায় পরীক্ষার আগেই জালিয়াতি ও প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে ১০ জনকে হাতেনাতে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের গুলশান বিভাগের টিম।
সেদিন শুরুতেই চক্রের হোতা নোমান সিদ্দিকে ধরা হয়। তারও আগে বেলা আড়াইটার দিকে হোয়াটসঅ্যাপে ফারুক স্যার নামের একজনের কাছ থেকে ২৭টি প্রশ্নের উত্তর আসে তার ফোনে। এর কয়েক মিনিট পর দুটি তিনটি করে প্রশ্নের উত্তর আসতে থাকে। অর্থাৎ, বেশ আগেভাগেই প্রশ্ন পেয়েছিল চক্রের সদস্যরা। সে কারণেই পরীক্ষা শুরু হলে মাত্র ২ মিনিটের মধ্য উত্তর চলে যায় বিভিন্ন পরীক্ষার্থীদের হাতে। যাদের ডিজিটাল ডিভাইস দিয়ে পাঠানো হয়েছিল কেন্দ্রে।
নোমান সিদ্দিক ছিলেন সেনাবাহিনীর ল্যান্স নায়েক। অসুস্থতায় অবসর নিয়ে জড়িয়ে পড়েন চাকরি নিয়োগ পরীক্ষার জালিয়াত চক্রে। তাকে ধরার পর একে একে ধরা হয় অন্যদের। প্রশ্নপত্র ফাঁসের জগতে এখন আলোচিত নাম জনপ্রতিনিধি মাহবুবা নাসরীন রুমা। বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলার বর্তমান ভাইস-চেয়ারম্যান। ছিলেন ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ম-আহবায়ক। ধরা পড়েছেন তিনিও।
নোমান ও রুমার পর এই চক্রের আরেক হোতা মাহমুদুল হাসান আজাদ। তার কাজ ছিল বিকাশ ও অ্যাকাউন্টে টাকা সংগ্রহ। ছিলেন অডিটর জেনারেল অফিসের জুনিয়র অডিটর। ঘুষ নেয়ার ঘটনায় চাকরিচ্যুত হন তিনি।
চক্রের হোতা নোমানের সাথে প্রশ্নফাঁস, ডিভাইস দিয়ে জালিয়াতি ও লেনদেনের করেয়কটি ফোনালাপও হাতে এসেছে যমুনার। যেগুলো থেকে তাদের প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়। চাকরি পাইয়ে দিতে লাখ লাখ টাকা লেনদেন হতো নোমানের ভাই রাজুর অ্যাকাউন্টে। ইসলামি ব্যাংকের সেই অ্যাকাউন্টের তথ্য-প্রমাণও পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। ঢাকা মেট্রোপলিটন গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার মশিউর রহমান বললেন, এসব তথ্য প্রতিরক্ষা হিসাব নিরীক্ষা কার্যালয়ে জানিয়েছেন তারা। কিন্তু তবুও ফাঁস হওয়া প্রশ্নের ওই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেছে তারা।
এর আগেও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ বা অধিদফতরের নিয়োগ পরীক্ষায় চক্রটির জালিয়াতির তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তবে তদন্তকারীরা এখনও এদের সাথে প্রশ্ন প্রণয়ন বা পরীক্ষা বাস্তবায়ন কমিটির কারো সংশ্লিষ্টতা পাননি।
/এডব্লিউ
Leave a reply