অনেকেই তো বাড়ির পুরনো অব্যবহৃত বাতিল জঞ্জাল ফেলে দেন, বা সেসবের মধ্যে যা বিক্রয়যোগ্য, তা বিক্রি করে দেন। এইভাবেই একদা বাড়ির ফেলনা জিনিসপত্র হিসেবে মাত্র ৩০ মার্কিন ডলারে (প্রায় ২ হাজার ৫৫০ টাকা) বিক্রি হয়ে গিয়েছিল একটি ছবি। পরে জানা যায়, চিত্রকর্মটির মূল্য নাকি ১ কোটি ডলার! বাংলাদেশি মূল্যমানে যা ৮৬ কোটি টাকারও বেশি!
কেন চিত্রকর্মটির এতো দাম? বলা হচ্ছে, সেটি নাকি এঁকেছিলেন এক জার্মান চিত্রশিল্পী যার নাম আলব্রেখট ড্যুরার। ১৫২৮ সালে মৃত্যু হয় তার। রেনেসাঁ যুগের সবচেয়ে খ্যাতনামা শিল্পী ও বুদ্ধিজীবীদের একজন হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়ে থাকে তাকে। পাশাপাশি সেই সময়ের শ্রেষ্ঠ জার্মান শিল্পীর খেতাবও পেয়েছিলেন তিনি। এমন একজন শিল্পীর নতুন কোনো কাজ এভাবে সামনে আসাটা সত্যিই খুব বিরল, খুব আকর্ষণীয়, খুব রোমাঞ্চকরও।
ড্যুরারের আঁকা চিত্রকর্মটির নাম ‘দ্য ভার্জিন অ্যান্ড চাইল্ড’। সেটি ১৫০৩ সালে আঁকা শেষ হয়েছিল। চিত্রকর্মটি রাখা আছে লন্ডনের ‘অ্যাগনিউস গ্যালারি’ নামের এক নিলামকারী প্রতিষ্ঠানে। এই গ্যালারির একজন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ক্লিফোর্ড শোরার নামের এক শিল্প-সংগ্রাহক।
ক্লিফোর্ড শোরার এই ‘দ্য ভার্জিন অ্যান্ড চাইল্ড’ প্রসঙ্গে বলেন, ২০১৯ সালে ম্যাসাচুসেটসে একটি পার্টিতে যাচ্ছিলেন তিনি। সঙ্গে উপহার নিতে ভুলে যান তিনি। অগত্যা উপহার কিনতে তাকে ছুটতে হয় এক বইয়ের দোকানে। দোকানি তাকে জানান, তার এক বন্ধুর কাছে ড্যুরারের একটি চিত্রকর্ম আছে। উপহার হিসেবে সেটিও কিনতে পারেন শোরার। শুনেই সেখানে ছোটেন শোরার। বিষয়টি নিয়ে তিনি খুব উত্তেজিতও ছিলেন। কারণ, ড্যুরারের অজানা কোনো চিত্রকর্মের সন্ধান সর্বশেষ মিলেছিল ১০০ বছরের বেশি আগে! ফলে শোরারের মনে হচ্ছিল, সত্যিই কি ড্যুরারের ছবি আর পাওয়া সম্ভব?
যাই হোক, শেষমেশ ওই ব্যক্তির কাছে পৌঁছে চমকে যান শোরার। চিত্রকর্মটি দেখেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, সেটি আসল।
তবে, শোরার চিনলেই তো হবে না। এটা যে আসল, সেটা তো প্রমাণও করতে হবে। ফলে চিত্রকর্মটি যে ড্যুরারের আঁকা, খাতায়-কলমে তা প্রমাণ করতে তিন বছর ধরে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলল। শেষমেশ প্রমাণ হল, চিত্রকর্মটি আসল। এবং সবকিছুর পরে শোরারের বিশ্বাস, নিলামে তোলা হলে চিত্রকর্মটির দাম ১ কোটি ডলারও ছাড়িয়ে যাবে।
তবে শোরার এটি জেনে সেদিনই, সেই উপহার কেনবার দিনেই আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন যে, চিত্রকর্মটি নাকি ২০১৭ সালে কেনা হয়েছিল একটি বাড়ির বাতিল জিনিসপত্র হিসেবে! দাম? মাত্র ৩০ ডলার!
সূত্র: জি নিউজ।
Leave a reply