প্রতি বছর ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ বিশ্বজুড়ে ভ্যালেন্টাইন ডে পালন করা হয়। এদিন উদযাপনকারীরা তাদের প্রিয়জনকে উপহার ও নানা আয়োজনের মাধ্যমে দিবসটি পালন করে থাকেন।
বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভালোবাসা দিবস বেশ ঘটা করে পালন করা হচ্ছে। এদিন পার্ক, বিনোদনকেন্দ্র, রেস্টুরেন্টগুলো ভালোবাসার মানুষে পরিপূর্ণ থাকে। প্রিয়জনকে সবাই ফুল, চকলেট ও বিভিন্ন সামগ্রী উপহার দিয়ে থাকেন। বেশ কয়েক বছর আগেও এই দিবসটি নিয়ে মানুষের মধ্যে এতো আকর্ষণ ছিল না। দিন যতই যাচ্ছে এই দিবস নিয়ে বিভিন্ন দেশে উন্মাদনা বাড়ছে। দিবসটি এতোদিন শুধু পশ্চিমাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, তবে এখন বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই দিবস।
ভ্যালেন্টাইন দিবস এলো যেভাবে
শতাব্দী পুরনো এই ভ্যালেন্টাইন ডে-এর উৎপত্তি নিয়ে এখনও অনেকের মধ্যেই রয়েছে ভিন্নমত। ভ্যালেন্টাইন ডে ও এর প্রবর্তক সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের ইতিহাস দু’টোই রহস্যের বেড়াজালে আটকা। তবে ইতিহাস বলছে, একজন বিখ্যাত সেইন্ট বা ধর্ম যাজকের নাম থেকে দিনটি এমন নাম পেয়েছে। তবে তিনি কে ছিলেন, এ নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন গল্প। তবে যে গল্পটি সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করা হয় তা হলো সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে রোমের একজন পুরোহিত ছিলেন।
সে সময় সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস বিবাহ নিষিদ্ধ করেছিলেন। কারণ হিসেবে তিনি বলেছিলেন, বিবাহিত পুরুষরা খারাপ সৈন্য হয়ে থাকে। এছাড়া তার যুক্তি ছিল, বিবাহিতদের চেয়ে অবিবাহিত পুরুষরা সেনা হিসেবে বেশি সক্ষম। তবে, এর প্রতিবাদ জানান ভ্যালেন্টাইন। তিনি মনে করেছেন, এটি অন্যায়। তাই তিনি নিয়মগুলো ভেঙে গোপনে যুগলদের বিয়ের ব্যবস্থা করেন।
এদিকে এই খবর ক্লডিয়াসের কানে চলে যায়। তখন ক্লডিয়াসের আদেশে ভ্যালেন্টাইনকে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয় এবং মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
জানা যায়, কারাগারে থাকা অবস্থায় ভ্যালেন্টাইনের সঙ্গে কারা প্রধানের মেয়ের পরিচয় হয়। তার প্রেমে পড়েন সেইন্ট। ১৪ ফেব্রুয়ারি যখন তাকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়, তখন ভ্যালেন্টাইন ওই মেয়েটির উদ্দেশে একটি প্রেমপত্র পাঠিয়ে যান। সেই চিঠিতে লেখা ছিল, ‘তোমার ভ্যালেন্টাইনের পক্ষ থেকে’।
যখন থেকে এই দিবস পালন করা হয়
৪৯৬ সালে প্রথম ভ্যালেন্টাইন ডে উদযাপন করা হয়। তবে সে সময় এই দিবসকে ঘিরে তেমন সাড়া ছিল না। অনেকের ধারণা, সেইন্ট ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুর দিনকে স্মরণ করতেই ফেব্রুয়ারির ১৪ তারিখ এই দিবস পালন করা শুরু হয়।
আবার অনেকের দাবি, রোমান উৎসব থেকে এই দিবসের উদ্ভূত বলে মনে করা হয়। রোমানদের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে লুপারকালিয়া নামে একটি উৎসব ছিল। এটি ছিল তাদের আনুষ্ঠানিকভাবে বসন্ত মৌসুম শুরু হওয়ার সময়। এই উদযাপনের জন্য সে সময় ছেলেরা একটি বাক্স থেকে মেয়েদের নাম লেখা চিরকুট তুলতেন। যে ছেলের হাতে যেই মেয়ের নাম উঠতো, তারা দু’জন ওই উৎসব চলাকালীন সময়ে বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড থাকতেন। অনেক সময় ওই জুটিই বিয়েও সেরে ফেলতেন। পরবর্তী সময়ে, গির্জা এই উৎসবটিকে খ্রিস্টান উৎসবে রূপ দিতে চেয়েছিল। অন্যদিকে সেইন্টকে স্মরণেও ফেব্রুয়ারিতে এই দিবস চালু হয়।
পঞ্চদশ শতকে ভালোবাসা দিবস জনপ্রিয় হতে শুরু করে। সে সময় একজন আরেকজনকে ভালোবাসার বার্তা জানাতো। এর পর সপ্তদশ শতকে এই দিনে ভালোবাসা প্রকাশ করে কার্ড পাঠানোর রীতি শুরু হয়। বাংলাদেশে ১৯৮০ এর দশক থেকে এ দিনটি জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে।
তথ্যসূত্র: হিস্টোরি নেটওয়ার্ক, ওয়ারউইকডেইলিনিউজ, বিবিসি।
ইউএইচ/
Leave a reply