স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, কুড়িগ্রাম:
আদালতের মামলা কিংবা ভ্রাম্যমাণ আদালতে মুচলেকা কোনো কিছুতেই তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক সুরুজ্জামাল মিয়া ও তার সন্তানরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুড়িগ্রামে রৌমারী উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ধনারচর চরের গ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদে পাশাপাশি ৪টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এসব ড্রেজার মেশিনের পাইপে ৫ থেকে ১০টি করে অতিরিক্ত শ্যালো মেশিন সংযোগ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের নাকের ডগায় আওয়ামী লীগ নেতা বালু উত্তোলন ব্যবসায় অতিষ্ঠ গ্রামবাসী মিথ্যা মামলায় পড়ার ভয়ে প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। আর এই সুযোগে কোটি কোটি টাকা বাগিয়ে নিচ্ছেন সুরুজ্জামাল মিয়া ও তার ছেলেরা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০২১ সালে ব্রহ্মপুত্র নদের বামতীরের ধনারচর চরের গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করার অপরাধে আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ্জামাল মিয়ার দুই ছেলে আতিকুর রহমান ও আজিজুর রহমানসহ ৪২ জন ড্রেজার মালিকের বিরুদ্ধে কুড়িগ্রাম রৌমারী আমলী আদালত একটি আদেশ জারি করেন। পুলিশকে তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত। তদন্ত করে পুলিশ ঘটনার সত্যতা পেয়ে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর আদালত তাদের বিরুদ্ধে গতবছরের ২৫ আগস্ট গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন।
এর আগে ২০২০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর একই এলাকায় অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধে উপজেলার সাবেক সহকারী কমিশনার (ভূমি) গোলাম ফেরদৌস এবং জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার যৌথ উদ্যোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। অভিযানের সময় আওয়ামীলীগ নেতা সুরুজ্জামাল, তার ছেলে আজিজুর রহমান, আব্দুল আলীম ভ্রমমাণ আদালতের ওপর চড়াও হয়। ঘটনার সময় তিনজনকেই ভ্রাম্যমাণ আদালত আটক করে এবং বালু উত্তোলনে ব্যবহৃত পাইপ ধ্বংস করা হয়। পরে ড্রেজার মেশিন না চালানোর শর্তে মুচলেকা দিয়ে তাদের ছেড়ে দেয় ভ্রমমাণ আদালত। কিন্তু বন্ধ না করে উল্টো ড্রেজার মেশিনের সংখ্যা বাড়িয়ে একাধিক স্থানে বালু উত্তোলন ব্যবসা অব্যাহত রেখেছেন তারা।
বালু ব্যবসায়ী গোলাবাড়ি আকন্দপাড়া গ্রামের মোকবুল হোসেন বলেন, গত বছর আদালতে আত্মসমর্থন করে বালু না তোলার শর্তে জামিন দেয় আদালত সবাইকে। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা বালু উত্তোলন বন্ধ রেখেছি। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা ও তার সন্তানরাসহ ৫-৬ জন এখনও বালু উত্তোলন করছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সাগর আলী বলেন, সুরুজ্জামাল কয়েক বছর আগে একটি“ছ” মিলের ব্যবসা করতেন। কিন্তু মাত্র এই ২-৩বছরের মাথায় সে বালুর ব্যবসা,সরকারি জমি দখলসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে আজ কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তার বিরুদ্ধে কেউই কথা বলতে পারেন না। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে সে এলাকার মানুষকে কোণঠাসা করে রেখেছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা সুরুজ্জামাল মিয়া বলেন, আমার একজন শ্যালক শেখ হাসিনার পার্সনোল গোয়েন্দা। একজন দেওয়ান গঞ্জের সাংবাদিক। এসব নিয়ে নিউজ করার দরকার নেই। খরচাপাতি থাকলে নিয়ে আসও মিলমিশ করে দেই। একলা তো বড়লোক হওয়া যায় না। দশে মিলে করি কাজ হারিজিতি নাহি লাজ, বোঝেন নাই?
রৌমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোন্তাছের বিল্লাহ বলেন, এই ধরনের কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই। তবে কেউ যদি অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন করেন তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল ইমরান বলেন, আমার কাছে যেগুলো অভিযোগ এসেছে সেগুলো বন্ধ করা হয়েছে। এরপরও কেউ যদি ড্রেজার মেশিন চালু করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Leave a reply