ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:
সবে মাত্র দেড় মাস হলো শপথ নিয়ে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েছে ঝিনাইদহের বহুল আলোচিত তৃতীয় নিঙ্গের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ঋতু। তিনিই দেশের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের চেয়ারম্যান। কেমন চালাচ্ছেন তার ইউনিয়ন পরিষদ? সাধারণ মানুষ কী পাচ্ছে নাগরিক সুযোগ-সুবিধা?
সদ্য সমাপ্ত ৩য় ধাপের নির্বাচনে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ৬ নং ত্রিলোচনপুর ইউনিয়ন থেকে চেয়ারম্যান হয়েছেন ঋতু। আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী নজরুল ইসলাম (ছানা) কে দ্বিগুণ ভোটে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেন নজরুল ইসলাম ঋতু। জেলা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ নভেম্বর ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ত্রিলোচনপুর ইউপি চেয়ারম্যান পদে নৌকার প্রার্থী পান ৪৫২৯টি ভোট। আর নজরুল ইসলাম ঋতুর প্রাপ্ত ভোট ৯৫৫৭ টি। ইতোমধ্যেই শপথ নিয়ে চেয়ারে বসেছেন তিনি, নিয়মিত যাচ্ছেন ইউনিয়ন পরিষদেও।
পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, পরিষদের বাইরের বারান্দা ও পরিষদ ভবনে তার অফিস, উভয় জায়গায়ই চলছে একের পর এক শালিশ। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে তিনি সাধারণ মানুষের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন। কঠোরতার সাথে অত্যন্ত সতর্কভাবে তিনি চালিয়ে যাচ্ছেন তার ইউনিয়ন পরিষদ। ঋতুর কর্মকাণ্ড ও কার্যক্রমে বিচার প্রত্যাশীরা অত্যন্ত খুশি বলে জানান।
জানা গেছে, গ্রামের স্কুলে ৫ম শ্রেণিতে পড়াশোনার সময় নজরুল ইসলাম ঋতু তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ, এ বিষয়টি প্রকাশিত হলে তিনি আশ্রয় নেন সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের দলে। তবে এলাকার মানুষের সাথেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন তিনি। গরিব ও অসহায় মানুষকে নিজের জমানো টাকা থেকে সহযোগিতা করতেন। গত ১৫ বছর ধরে তিনি তার এলাকার মানুষদের বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে আসছেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী ও সাধারণ জনগণ জানান, আমরা এখন কোনো ধরনের স্বজনপ্রীতি বা দুর্নীতি তার কাছ থেকে দেখিনি। তিনি দিনের পর দিন মানুষের কাছে ছুটে চলেছেন। এভাবে চললে অবশ্যই এ ইউনিয়ন বাংলাদেশে একটি ব্যতিক্রমী ইউনিয়ন হিসেবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন ইউনিয়ন পরিষদে আগত সাধারণ মানুষ ও বিচারপ্রার্থীরা।
ইউনিয়ন পরিষদ কর্মকর্তা হামিদুল ইসলাম জানান, সাধারণ মানুষ তার কাছে যেতে পারছে খুব সহজেই। তিনি দল মত নির্বিশেষে সকলকেই সমান গুরুত্ব দিচ্ছেন। সঠিক বিচার পেতে শুরু করেছে জনগণ।
চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ঋতু জানান, আমার ইউনিয়নের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী যদি দুর্নীতি করে সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি নিজেও যদি দুর্নীতি করেন, তা হলে সরকার যে শাস্তি দেবে তাই মাথা পেতে নেবেন বলেও জানান।
তিনি আরও বলেন, আগে জন্ম নিবন্ধন, বয়স্কভাতা, বিধবাভাতার কার্ড নিতে অনেক টাকা দিতে হতো বলে শুনেছি। এখন থেকে সরকার নির্ধারিত টাকা ছাড়া বেশি টাকা গুনতে হবে না। মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার চেষ্টা করছি। সে যে রাজনৈতিক দলেরই কর্মী হোক না কেন, আমরা সবাই একসঙ্গে কাজ করব। কে কোন দল করে সেটি আমি দেখতে চাই না। দেশের প্রথম তৃতীয় লিঙ্গের চেয়ারম্যান হয়ে এই ইউনিয়নকে দেশের মধ্যে এক নম্বরে নিয়ে যেতে চাই। আজীবন জনকল্যাণে কাজ করতে চাই।
তিনি আরো বলেন, শুনেছি আগে জন্ম নিবন্ধন, বয়স্কভাতা, বিধবাভাতার কার্ড নিতে হলে বেশি টাকা দিতে হতো। এখন থেকে সরকার নির্ধারিত টাকা ছাড়া ইউনিয়নবাসীর বেশি টাকা গুনতে হবে না।
উল্লেখ্য-তৃতীয় লিঙ্গের নজরুল ইসলাম ঋতু ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের ধলা দাদপুর গ্রামের আব্দুল কাদের ও ফাতেমা বেগম দম্পতির সন্তান। ৫ ভাইবোনের মধ্যে ঋতু তৃতীয়।
/এসএইচ
Leave a reply