ঝিনাইদহ প্রতিনিধি
ঝিনাইদহের মাঠে মাঠে বাতাসের সাথে দুলছে বোরো ধানের শীষ, সেই সাথে দুলছে চাষীর স্বপ্ন। কিন্তু সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিনত হতে শুরু করেছে। বিভিন্ন উপজেলায় উঠতি বোরো ধানে ক্ষতিকারক ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। এতে করে ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে চাষীরা। তবে নেক ব্লাস্টে সংক্রমিত জমির ধান কোন ভাবেই রক্ষা করা সম্ভব নয় বলছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় বোরো ধানে সংক্রমিত হতে শুরু করেছে ক্ষতিকারক ব্লাস্ট রোগের। এখন পর্যন্ত কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুরসহ জেলায় প্রায় ৭ হেক্টর জমিতে রোগের সংক্রমণ ঘটেছে। তবে বিভিন্ন এলাকার মাঠে জরিপ চলছে ব্লাস্ট রোগের ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ ও সংক্রমণ ঠেকাতে। চলতি মৌসুমে জেলায় বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৯৩ হাজার ৯ শ’ ৫০ হেক্টর জমিতে।
বেল পাড়া গ্রামের নিখিল কুমার জানান, তার ১৫ কাঠা ব্রি-৬৩ জাতের ধান শীষ বের হওয়ার পর নেকব্লাস্ট রোগের আক্রমণে প্রায় ৭৫% নষ্ট হয়ে গেছে।
মল্লিকপুর গ্রামের প্রন্তিক চাষী মুক্তার হোসেন ১৬ কাঠা জমির ব্রি-২৮ জাতের ধানের শীষ বের হওয়ার পর শীষগুলো পচে শুকিয়ে চিটে হয়ে গেছে।
বলরামপুর গ্রামের কৃষক জাহিদ হোসেন ৬ বিঘা জমিতে নতুন জাতের ব্রিএন৬৩ ধান চাষ করেছিলেন। তার অভিযোগ, কৃষি কর্মকর্তারা সময়মতো ছত্রাকনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দিলে কৃষকদের এমন ক্ষতি হতো না।
পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক মুক্তার হোসেন জানান, চার বার স্প্রে করেও তিনি কোন ফল পাননি।
কালীগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার আব্দুল্লাহ আল নোমান জানান, ব্লাস্ট রোগ সাধারনত ‘নেক, লিভ, নেট’ এ তিন ধরনের হয়ে থাকে। এর মধ্যে সব থেকে ক্ষতিকারক নেক ব্লাস্ট যেটি দমন যোগ্য নয়। আক্রান্ত জমির মধ্যে নেক ব্লাস্টের পরিমাণ প্রায় ৪ হেক্টর। ইতোমধ্যেই আক্রান্ত বিভিন্ন ক্ষেত পরিদর্শন করেছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। এ রোগ সংক্রমণের ফলে প্রথমে ধান গাছের শীষ ভেঙে ২ থেকে ৩ দিনের মধ্যেই ধান সম্পূর্ণ শুকিয়ে চিটা হয়ে যায়, সাথে সাথে শুকিয়ে যায় ধান গাছের পাতা।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ-পরিচালক জি এম আব্দুর রউফ জানান, আবহাওয়া জনিত কারণে এমন হয়েছে। ব্লাস্ট আক্রান্ত ধান খাওয়া কিংবা বীজের জন্য ব্যবহার সম্পূর্ণ ক্ষতিকারক।
তিনি আরও বলছেন চাষীদের আতঙ্কিত না হওয়ার পাশাপাশি জমিতে ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে বলা হচ্ছে। ধরন ভেদে অন্যান্য ব্লাস্ট দমন যোগ্য হলেও নেক ব্লাস্ট আক্রান্ত ধান রক্ষা করা সম্ভব নয়।
Leave a reply