দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের কেন্দ্রবিন্দুতে কেন নারীবিদ্বেষ?

|

'মি টু' বিরোধী র‍্যালিতে অংশ নেয় দক্ষিণ কোরিয়ার হাজারো তরুণ। ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জন্য লৈঙ্গিক রাজনীতি একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক হতে চলছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দুই প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীর কারও সম্পর্কেই নারী ভোটারদের খুব বেশি আস্থা নেই বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি। তাই গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে যিনি ঠিকঠাকভাবে সামলে নিতে পারবেন, প্রেসিডেন্টের দফতরে প্রবেশ করা তার জন্যই সহজ হবে। তবে, নারীবিদ্বেষ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠা দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা কোন উপায়ে বিষয়টিকে সামলাবেন, তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন।

রক্ষণশীল নেতা ইয়ুন সুক ইয়ুল এবং উদারপন্থী নেতা লি জায় মিয়ুং- প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ের জন্য দুই নেতাই এগিয়ে যাচ্ছেন সমান তালে। তবে আইনপ্রণেতা হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই এই দুজনের কারোরই, আর দেশটির গণতান্ত্রিক ইতিহাসে কখনোই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। সেই সাথে, দুই পার্টির ওপরই রয়েছে নারীবিদ্বেষের অভিযোগ। লি জায় মিয়ুংয়ের রাজনৈতিক দলের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতার নামে রয়েছে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ। এমনকি বুসানের মেয়রকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে জেলেও যেতে হয়েছিল।

ইয়ুন সুক ইয়ুল (ডানে) এবং লি জায় মিয়ুং (বাঁয়ে)। ছবি: সংগৃহীত

অন্যদিকে, লৈঙ্গিক সমতা বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে নির্মূল করার প্রতিজ্ঞাকে পিপলস পাওয়ার পার্টির নেতা ইয়ুন সুক ইয়ুল তার নির্বাচনী ক্যাম্পেইনে দারুণভাবে প্রাধান্য দিয়েছেন। সাধারণত পারিবারিক, শিক্ষা, সমাজকল্যাণ এবং শিশুদের বেড়ে ওঠার ব্যাপারে নানা সেবার বিষয় নিশ্চিত করে আসছে লৈঙ্গিক সমতা বিষয়ক মন্ত্রণালয়। তবে জাতীয় বাজেটের মাত্র ০.২% ব্যয় করে এই মন্ত্রণালয়। তবে, ইয়ুন সুক ইয়ুল অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী যে তার এই সিদ্ধান্ত তরুণদের ব্যাপক আকৃষ্ট করবে। ইয়ুন সুক ইয়ুলের নির্বাচনী প্রচারণার কাজ করা ২৯ বছর বয়সী পার্ক মিন ইয়াং বিবিসিকে জানান, তরুণ এবং যুবকদের প্রায় ৯০ শতাংশই নারীবাদ বিরোধী, বা তারা নারীবাদকে সমর্থন করে না।

উন্নত বিশ্বের মধ্যে নারী অধিকার ইস্যুতে বেশ নাজুল অবস্থায় রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। দেশটির তরুণ ও যুবকদের মধ্যে অনেকেই নারীবাদকে সমতার লড়াওইয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো প্রভাবক হিসেবে দেখতে আগ্রহী নয়। বরং, তাদের অনেকেই নারীবাদকে পুরুষের প্রতি বৈষম্যের হাতিয়ার বলে মনে করে। তারা মনে করে, তাদের প্রাপ্য চাকরি এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও কেড়ে নেয়া হচ্ছে নারীবাদী আন্দোলনের মাধ্যমে।

২০১৮ সালে দুনিয়া কাঁপানো ‘মি টু’ আন্দোলনের ঝাঁপটা লেগেছিল দেশটির রাজধানী সিউলেও। বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে যৌন হেনস্তার অভিযোগ আসার পর সিউলের রাস্তায় প্রতিবাদে নেমেছিল প্রায় হাজার দশেক তরুণ-তরুণী। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে দৃশ্যপট অনেকটাই পাল্টে গেছে। এবার এসেছে ‘মি ফার্স্ট’। স্থানীয় একটি পত্রিকার জরিপে উঠে এসেছে, ৭৯% পুরুষ নিজেদের বৈষম্যের শিকার বলে মনে করে শুধুমাত্র তাদের লৈঙ্গিক পরিচয়ের জন্য। তাদের মতে, নারীবাদকে ভুলপথে পরিচালিত করা হচ্ছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার পুরুষদের এই ধারণাকে অবশ্য সমর্থন করে না তাদের উপার্জনের খতিয়ান। দেশটির শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের একটি পরিসংখ্যানে ২০২০ সালে এসেছিল, একজন পুরুষের মাসিক আয়ের মাত্র ৬৭.৭% পান সেই দেশের নারীরা। উন্নত দেশগুলোর মধ্যে আয়ের এই ব্যবধান সর্বোচ্চ। তবে তাতে কর্ণপাত করছেন না প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা। নারীবিদ্বেষ কাজে লাগিয়ে নির্বাচনী ময়দানে ফসল ঘরে তোলার কাজেই বেশি আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে দুই প্রার্থীকে।

আরও পড়ুন: ন্যাটোতে ঢোকার আগ্রহ কমে যাচ্ছে: জেলেনস্কি

এম ই/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply