ঐতিহাসিক পট পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে কিউবায়। ছয় দশক পর দেশটিতে অবসান হচ্ছে কাস্ত্রো যুগের। ১0 বছর দায়িত্ব পালনের পর আজ প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়ছেন রাউল কাস্ত্রো। সমাজতান্ত্রিক দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল ডিয়াজ ক্যানেল। কাস্ত্রো পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত মিগুয়েল কিউবান তরুণদের মাঝে বেশ জনপ্রিয়। চারদিকে আগ্রহ ঠিক কী কারণে কিউবায় ক্যাস্ত্রো যুগের অবসান ঘটছে?
কিউবা বিপ্লবের অন্যতম প্রাণপুরুষ ফিদেল ক্যাস্ত্রো। বন্ধু চে গেভারাকে নিয়ে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর, কিউবায় যার প্রভাব ছিল একচ্ছত্র। কিন্তু বিরল একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন ক্যাস্ত্রোরা। তাদের নেতৃত্বে বিপ্লব সম্পাদিত হলেও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে আসীন হতে সময় নিয়েছেন ১৮ বছর! ১৯৫৯ সালে বিপ্লব পরবর্তী কিউবায় ছয় মাসের জন্য প্রেসিডেন্ট ছিলেন ম্যানুয়েল উরুশিয়া। এরপর ১৭ বছর এই পদে থাকেন অসভাল্দো দরতিকোস। অবশ্য, ক্ষমতার মূল লাগাম ছিলো কাস্ত্রো ভাইদের কাছেই।
১৯৭৬ সালে প্রেসিডেন্ট হয়ে ৩০ বছরের বেশি সময় দেশ শাসন করেন ফিদেল কাস্ত্রো। ফিদেলের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ২০০৮ সালে তার স্থলাভিষিক্ত হন ছোট ভাই রাউল কাস্ত্রো। শুরুতেই রাউল ঘোষণা দেন ১০ বছরের বেশি প্রেসিডেন্ট থাকবেন না। মূলত, সেই কথা রেখেই পদ ছাড়ছেন এই বিপ্লবী নেতা।
রাউলের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে কিউবার সর্বস্তরের মানুষ। দেশটির সিনিয়র সাংবাদিক নরম্যান্দো হার্নান্দেজ বলেন, কিউবার এই পরিবর্তন খুবই জরুরি ছিলো। বিশ্ব রাজনীতির পট পরিবর্তনের পাশাপাশি অর্থনীতি, প্রযুক্তি সবই আমূল পাল্টে গেছে। পরিবর্তিত এ বিশ্বে টিকে থাকতে কিউবার নেতৃত্বেও চাই পরিবর্তন। রাউল কাস্ত্রো ক্ষমতা ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে কিউবাকে আরও এগিয়ে নিলেন।
অনেকটাই নিশ্চিতভাবেই ক্ষমতায় আসীন হচ্ছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল ডিয়াজ ক্যানেল। ৫৭ বছর বয়েসি এই নেতা কিউবার তরুণদের মাঝে তুমুল জনপ্রিয়। তৃণমূল রাজনীতি থেকে উঠে আসা মিগুয়েল আলোচনায় আসেন ২০০৩ সালে ভিলা ক্লারা প্রদেশের গভর্নর হবার পর। এরপর দায়িত্ব পালন করেন শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে মিগুয়েল সম্পর্কে কিউবার মানুষের মনোভাব উঠে এসেছে। সেখানে মিগুয়েলকে আধুনিক একজন নেতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন তারা। তার চিন্তা-চেতনা, কাজের ধরন সবকিছুতেই নতুনত্ব আছে উল্লেখ করে মানুষ বলছে, তাদের বিশ্বাস নতুন কিউবার নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তিনিই এখন যোগ্য।
প্রেসিডেন্ট হবার পর কিউবায় সংস্কার আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন রাউল কাস্ত্রো। অবকাঠামো, বাণিজ্য, কূটনীতির মতো ইস্যুতে সংস্কার উদ্যোগও নিয়েছিলেন তিনি। কথা রেখে ঠিক সময়মতো ছেড়ে দিয়েছেন দায়িত্ব, পদ। সৃষ্টি করেছেন দৃষ্টান্ত। সমাজতান্ত্রিক কিউবায় অসম্পূর্ণ এসব সংস্কার কীভাবে সম্পন্ন করবেন নতুন প্রেসিডেন্ট সেটিই এখন দেখার বিষয়।
যমুনা অনলাইন: টিএফ
Leave a reply