মনিরুল ইসলাম:
সারাদেশে বেড়েই চলেছে গণপরিবহনে যৌন হয়রানি। বাসে নারীদের প্রায় ৪৫ ভাগই যৌন হয়রানির শিকার হন। যার বেশিরভাগই আবার নীরবে সয়ে যান পুরো ঘটনা। আবার কেউ কেউ প্রতিবাদও করেন।
একজন কলেজছাত্রীকে পাওয়া গেছে, যিনি বাসে যৌন হয়রানির শিকার হয়ে কাউকে পাশে না পেয়েও অভিযুক্তকে নাস্তানাবুদ করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এমন পরিস্থিতিতে উল্টো দোষারোপ করা হয় ভুক্তভোগীকেই।
নিজের সেই অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে সাহসী মেয়ে কাজী জেবুন্নেসা কামাল নেহা জানান, রাজধানীর শনির আখড়া থেকে কল্যাণপুর যাওয়ার সময় মৌমিতা পরিবহনে ওঠার পর ঘটে ওই ঘটনা ঘটে। বাসে যখন উঠি তখন দেখি সবাই সিটে বসে পড়েছে। কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে। তখন ওই ব্যক্তি আমাকে টাস করার চেষ্টা করছে। তার অঙ্গভঙ্গি দেখে আমি তার কলার ধরি, মারধর করি। তাকে পুলিশের কাছে দিবো বা কারোর কাছে দিবো কিন্তু গাড়ির দরজা তো লাগায়নি আবার তাকে ছেড়ে দিতে বলছে। আবার বলছে আরে ভাই মাফ চেয়ে চলে যান, আপু সিন ক্রিয়েট করেন না বাদ দেন। এসব করার থেকে আপনি আপনার বাবার গাড়িতে চলেন। পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চললে তো পাবলিক একটু গায়ে হাত দিবেই।
নেহার সাথে সেদিন বাসে তার মা হালিমা খাতুনও ছিলেন। একইদিনে তিনিও যৌন হয়রানির শিকার হন। তার কিছুক্ষণ পরই ঘটে তার মেয়ের সাথে। সমস্যা হলো হয়রানির কথা অন্য যাত্রীদের বললে এগিয়ে আসে না কেউই।
ভুক্তভোগী কলেজ ছাত্রীরা মা হালিমা আক্তার বলেন, ওই সময় সব লোকগুলো এমনভাবে ইনসাল্ট করলো যেন আমার মেয়ে একটা বিশেষ জন্তু। সে এত বড় একটা মানুষের সাথে এভাবে করলো, তার জামা ছিঁড়ে দিলো। তখন আমি সেখানে কিছু কথা বলার পর সবাই চুপ হয়ে যায়। তখন আমি বলি এগুলো তো পুরুষ না, প্যান্ট-শার্ট পরা থাকলেই সবাই পুরুষ হয়ে না।
নেহা বা তার মায়ের মতো এমন ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা এখন অহরহ। ঘর বা অফিসের পর যেখানে নিরাপদ থাকার কথা যানবাহন, সেখানে ঘটছে যৌন হয়রানি। নিয়মিত বাস ব্যবহার করেন যারা প্রায় সবার অভিজ্ঞতাই খারাপ। কেউ সরাসরি ভুক্তভোগী আবার কেউ প্রত্যক্ষদর্শী।
বাসে যৌন হয়রানির পরিস্থিতি যে কতো ভয়াবহ, তা উঠে এসেছে আচল ফাউন্ডেশন নামের একটি সংস্থার জরিপে। তাদের তথ্য বলছে, গণপরিবহন ব্যবহার করা নারীদের ৪৫ ভাগ বাসে যৌন হয়রানির শিকার। এমনকি ফেসবুকে যতো নারীকে হয়রানি করা হয় তার চেয়েও বেশি নারী হেনস্থা হয় গণপরিবহনে।
আচল ফাউন্ডেশনের সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, সাতচল্লিশ শতাংশের যে সংখ্যাটা তাদের মধ্যে প্রায় ৬৫ শতাংশ তরুণী জানিয়েছেন, তারা আপত্তিকর স্পর্শের শিকার হয়েছেন যখন তারা গণপরিবহনে যাতায়াত করেন। এছাড়া যানবাহনে চলার সময়ে কুদৃষ্টির মাধ্যমে যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন প্রায় ২০ দশমিক ৪ শতাংশ তরুণী।
বাস্তবতা এমন যে, কেউ হয়রানির শিকার হলে পুলিশ ডাকারও সময় থাকে না। তাই কলেজছাত্রী নেহার মতো আইন হাতে তুলে নেয়ার ঘটনা ভেসে আসে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
আরও পড়ুন: উত্তরায় ভাতিজার হাতে ফুপা খুন
ইউএইচ/
Leave a reply