তালাকের পরে তরুণীকে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ

|

ছবি: প্রতীকী

ফরিদপুর প্রতিনিধি:

ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় ২২ বছর বয়সী এক সন্তানের জননীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করার পর ডিভোর্স দিয়ে ফের তাকে জোর করে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি মেম্বারের ছেলে ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।

ভুক্তভোগীকে কয়েক দফা ধর্ষণের পর পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা পরে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এই ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত যুবকের নাম মো. ফুয়াদ শেখ। তিনি উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের সিংহ প্রতাব গ্রামের ইউপি সদস্য শাহজান শেখের ছেলে। এই ঘটনায় আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন ওই ভুক্তভোগী নারী। মামলা করার পর আসামিরা ওই নারীর পরিবারকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছে।

ভুক্তভোগী ওই নারীর মা জানান, বছর পাঁচেক আগে আমার মেয়ের বিয়ে হয়েছিল পার্শ্ববর্তী নগরকান্দা উপজেলার এক ছেলের সাথে। বিয়ের পর তাদের সুখের সংসার চলছিল। আমার মেয়ের একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে। কিন্তু আমার মেয়ে যখন স্বামীর বাড়ি থেকে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে আসতো তখন তাকে নানাভাবে উত্যক্ত করতো প্রতিবেশী ইউপি সদস্য শাহজাহান শেখের ছেলে ফুয়াদ শেখ। একপর্যায়ে আমার মেয়েকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে সে। আনুমানিক দেড় মাস আগে আমার মেয়ে তার স্বামীকে তালাক দেয়। পরে ফুয়াদ আমার মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে বিয়ে করে। বিয়ের মাসখানেক যেতে না যেতেই গত ১০ মার্চ তাকে ডিভোর্স দেয় ফুয়াদ। বিষয়টি নিয়ে দুই পরিবারের মাঝে ঝামেলা চলছিল।

তিনি বলেন, চলমান ঝামেলার মধ্যে গত ১২ মার্চ শনিবার সন্ধ্যায় ফের আমার মেয়েকে বাড়ির পাশে ইটের রাস্তা থেকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায় ফুয়াদ শেখ ও তার সহযোগী সিংহপ্রতাব গ্রামের সাইদুর রহমান সাহিদ শেখ (৪৫), জাকির মাতুব্বর (৪০), মুরাদ খালাসী (৩৫) ও জাফর শেখ (৩৫)। পরে ফরিদপুর শহরের মহা বিদ্যালয়ের পাশে থাকা জাকিরের বাসায় আটকে রেখে টানা ৮ দিন একাধিকবার ধর্ষণ করে ফুয়াদ। এতে আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঘটনাটি নিয়ে আমার মেয়ে মামলা করতে চাইলে ফুয়াদ তার সহযোগীদের বাসায় ডেকে নিয়ে ১৯ মার্চ রাতে তাকে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। শুধু ধর্ষণ নয়, তাকে নির্যাতন ও পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়ে পরদিন ২০ মার্চ বিকাল ৫টার দিকে বাড়ির পাশে ফেলে রেখে যায়। তখন বাড়ির লোকজন তাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে।

তিনি আরও বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ফুয়াদ শেখ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আমার মেয়ে বাদী হয়ে ফরিদপুর বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল আদালতে ধর্ষণ মামলা করেছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে ফরিদপুর পুলিশের বিশেষ শাখা পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। মামলার পর থেকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে আসামিরা আমার স্বামী ও সন্তানদের এলাকা ছাড়া করে রেখেছে। এমনকি আমাদের জমির পেঁয়াজও উঠাতে দিচ্ছে না তারা।

এ বিষয় অভিযুক্ত আসামিদের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাদেরকে পাওয়া যায়নি। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ঘটনার মূল হোতা ফুয়াদ শেখের বাবা ইউপি সদস্য শাহজাহান শেখ বলেন, ঘটনাটি সাজানো নাটক। আমাদের হয়রানি করার জন্য মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। ওই নারীকে আমার ছেলে বিয়ে করেছিল। বিয়ের পর আবার ডিভোর্স দিয়ে দিয়েছে।

সালথা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আশিকুজ্জামান বলেন, এ ঘটনায় থানায় কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। তবে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এই বিষয়ে ফরিদপুর পিবিআই’র পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, বৃহস্পতিবার মামলা হয়েছে, আমরা এখনো আদালতের নির্দেশনা হাতে পাইনি। আদালতের নির্দেশ হাতে পেলে তদন্ত শুরু করবো।

ইউএইচ/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply