আবু বকর রায়হান:
বিয়ে করা ছাত্রীকে সভাপতি করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলের নতুন কমিটি দেয়ায় অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি ইশরাত জাহান জেরিন ও সেক্রেটারি অপর্ণা দেবীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় হলে সিনিয়রদের মারধর, সিট দখলের রাজনীতি, হলের ডাইনিংয়ে অনিয়ম এবং মাদক সেবনের অভিযোগ রয়েছে।
রোববার (০৩ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ফয়জুন্নেসা হল শাখার কমিটি দেয়ার বিষয়টি জানা গেছে।
ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, বিবাহিত কেউ ছাত্রলীগের কর্মী থাকতে পারবে না বলা হলেও কমিটিতে সভাপতি পদ পাওয়া ইশরাত জাহান জেরিন বিবাহিত বলে অভিযোগ রয়েছে। সাধারণ সম্পাদক অপর্ণা দেবীর বিরুদ্ধে গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিনিধি জান্নাতুল ফেরদৌসকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ রয়েছে। একই ঘটনায় অভিযুক্ত কমিটিতে সহ-সভাপতি পদ পাওয়া জিনাত সুলতানা ইভা ও সিসিলি জামানও।
এর আগে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে ইসরাত জাহান জেরিন, অর্পণা দেবীসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে সেসময়কার ডাইনিং ম্যানেজার লিপি আক্তারকে রুমে নিয়ে সাউন্ড বক্সে উচ্চস্বরে গান বাজিয়ে মারধর করার অভিযোগ রয়েছে। এসময় বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবরও প্রচারিত হয়। হলটির বিশ্বস্ত এক সূত্র নিশ্চিত করেছেন কমিটির একাধিক নেতৃ হলেই মাদক গ্রহণ করেন। এমন বিতর্কিত নেতৃদের নিয়ে কমিটি দেয়ায় ভবিষ্যতে হলের পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে বলে জানান ফয়জুন্নেসা হলের শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া নতুন কমিটির কয়েকজন নেত্রীর বিরুদ্ধে হলের সিট নিয়ন্ত্রণ, সাধারণ শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক লাঞ্ছিত করা, আবাসিক হলের নিয়ম অমান্য করা, ডিজে পার্টি করে সিনিয়রকে মারধর, নেত্রীদের নিজেদের মধ্যে হাতাহাতি, টিভি রুম ও নিজেদের রুমে নিয়ে শাসানো, মাদকের আসর বসানো, নিজেদের পক্ষে সাফাই গেয়ে ফেসবুকে জোরপূর্বক পোস্ট করানো, হলের ডাইনিং নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যখন তখন সাধারণ শিক্ষার্থীদের মিল বন্ধ করাসহ অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
হলের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, হল কমিটি দেওয়ার আগেই আমাদের হলে প্রশাসন থেকে বেশি শক্তিশালী ছিল ছাত্রলীগের নেতৃরা। সামনের দিকে হলের শৃঙ্খলা আরও অনেক খারাপ হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই হলের এক ছাত্রলীগ কর্মী বলেন, হলে যারা অরাজকতা করে আসছে, তারাই পদ-পদবি পেয়েছে। এখন তাদের নৈরাজ্য আরও বেড়ে যাবে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এখন তাদের ভয়ে সর্বদা তটস্থ থাকবে।
নতুন কমিটিতে প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া এক নেত্রী বলেন, বিয়ে করেও যদি সভাপতি হওয়া যায়, তাহলে রাজনীতি করার কী দরকার। নতুন কমিটিতে ত্যাগীদের মূল্যায়ন না করে বরং অযোগ্য ও বিভিন্ন অপকর্মে অভিযুক্তদেরকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে। এদের কারণেই ছাত্রলীগের দুর্নাম হয়।
বিয়ে করার অভিযোগের বিষয়ে ইশরাত জাহান জেরিন বলেন, এ অভিযোগ ভিত্তিহীন। অসাধু উদ্দেশ্যে এ তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। সত্যতা পেলে আমি পদত্যাগ করবো।
তবে বিবাহিত ব্যক্তিকে সভাপতি মনোনয়নের বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ঘটনার সত্যতা খতিয়ে দেখা হবে। বিষয়টি প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া বিভিন্ন বিষয়ে অভিযুক্তদের পদ দেওয়ার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি বলেন, একসাথে চলাফেরা করতে গেলে দুয়েকটি অঘটন ঘটেই। তবে সবার সাথে কথা বলেই কমিটি দেওয়া হয়েছে।
/এডব্লিউ
Leave a reply