ফিল্ম পড়ানোর ফল পেতে শুরু করেছে দেশ, কানের জুরি বিধান রিবেরু

|

চলচ্চিত্র সমালোচক বিধান রিবেরু। ছবি: সংগৃহীত

মর্যাদাপূর্ণ কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৫তম আসরে ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব ফিল্ম ক্রিটিকসের (ফিপরেস্কি) বিচারক হিসেবে আমন্ত্রিত হয়েছেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র সমালোচক বিধান রিবেরু। আগামী ১৭ মে থেকে ২৮ মে পর্যন্ত ফ্রান্সের কান শহরে চলবে চলচ্চিত্রের এ জমকালো আসর। যমুনা নিউজের সাথে আলাপচারিতায় কানের জুরি হিসেবে আমন্ত্রণ পাওয়া বিধান রিবেরু বলেছেন, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ফিল্ম পড়ানো শুরু হয়েছে ১০-১২ বছর আগে। আর এখন এসে সেই ফল আমরা পেতে শুরু করেছি।

বিধান রিবেরু প্যারালাল সেকশন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিটিকস উইকে নির্বাচিত ছবিগুলো দেখে সেরা ছবি নির্বাচন করবেন। সেই সেকশনে তার সাথে থাকবেন বিভিন্ন দেশের অন্যান্য চলচ্চিত্র সমালোচকেরা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব বাড়ছে এবং তা ঘটছে ধারাবাহিকতা মেনেই। এমনটিই মনে করেন চলচ্চিত্র সমালোচক বিধান রিবেরু। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ফিল্মগুলো যে আন্তর্জাতিক পরিসরে যাবে তা কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল আগে থেকেই। খেয়াল করে দেখবেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিল্ম পড়ানো শুরু হয়েছে ১০-১২ বছর আগে। যেহেতু ছেলেমেয়েদের পড়ানো হচ্ছে, তার মানে এর ফলাফল কোথাও তো যাবে। ১০-১২ বছর পর কিন্তু আমরা ফল পেতে শুরু করেছি। এই ছেলেমেয়েরাই কিন্তু সিনেমা বানাচ্ছে। তরুণরা যুক্ত হচ্ছে সহকারী পরিচালক হিসেবে, সিনেমাটোগ্রাফার, সহকারী সিনেমাটোগ্রাফার হিসেবে। তারা নিজেরাও কিছুদিন কাজ শিখে পরিচালনায় যাচ্ছে। এই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ১০-১২ বছর আগে। এখন আমরা ফল পেতে শুরু করেছি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব আরও বাড়বে এবং আমরা আরও ভালো করবো।

জুরিদের কাজের ধরন সম্পর্কে ঢাকা আন্তর্জাতিক ফিল ফেস্টিভ্যালে জুরির দায়িত্ব পালন করা বিধান রিবেরু বলেন, জুরিরা চলচ্চিত্রগুলো সম্পর্কে তাদের যুক্তি তুলে ধরেন। আমার প্যারালাল সেকশনে আরও ৩ জন জুরি আছেন। আমি আমার যুক্তিগুলো তুলে ধরবো যে কোন ছবিগুলো শ্রেষ্ঠ। জুরিদের মধ্যে কখনও কখনও টেস্ট একই রকম থাকে। কারণ, ভালো ছবি কোনটি তা কিন্তু বুঝতে পারা যায়। আমরা ২-৩টি ছবির লিস্ট তৈরি করি। তারপর নিজেদের মধ্যে আলোচনা করি, ১ নম্বর ছবিটি কেন ভালো হয়েছে, বা ২ নম্বর ছবিটি কেন ২ নম্বরে। এই ধরনের আলোচনা হয় প্রচুর। যেমন ঢাকা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে আমাদের প্রায় ২ ঘণ্টার আলোচনা হয়েছে। সেখানে ভারতীয় ও মিশরীয় জুরিও ছিলেন। কানেও এ রকম প্যানেলভিত্তিক আলোচনা হবে। সে আলোচনায় যুক্তি-খণ্ডন শেষে সিদ্ধান্তে আসা হবে। তাছাড়া এখানে কিছু ক্রাইটেরিয়া তো থাকেই যেমন, সিনেমাটোগ্রাফি, স্ক্রিপটিং, ব্লকিং, মন্তাজ, সম্পাদনা, সাউন্ড, প্লট, অভিনয়, ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর। এসব নিয়ে ধরে ধরে আলোচনা করে কোন ছবিটি সেরা সে ব্যাপারে ঐক্যমতে আসা হয়।

২০০৫ সালে সাংবাদিকতায় যুক্ত হন বিধান রিবেরু। এরপর বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে কাজ করেছেন তিনি। কম্পিউটার বিজ্ঞানে স্নাতক করা বিধান রিবেরু নরওয়ে সরকারের বৃত্তি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর করেছেন।

এর আগে, মর্যাদাপূর্ণ কান চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র সমালোচক হিসেবে আহমেদ মুজতবা জামাল ২০০২ সালে ফিপরেস্কির বিচারক হন। এরপর ২০০৫ ও ২০০৯ সালে আরও দু’বার ফিপরেস্কির বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন আহমেদ মুজতবা জামাল। প্রথম বাংলাদেশি নারী হিসেবে ২০১৯ সালে সাদিয়া খালিদ রীতি ফিপরেস্কি জুরির আমন্ত্রণ পান। ২০২১ সালে কানের অফিসিয়াল সিলেকশনে আঁ সার্তে রিগা সেকশনে জায়গা পেয়ে ইতিহাস গড়ে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’।

এম ই/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply