শিক্ষার্থী ও নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য ঢাকা কলেজে গেলে ছাত্রদের তোপের মুখে পড়েন। মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা কলেজে যান লেখক ভট্টাচার্য।
ঢাকা কলেজে লেখক ভট্টাচার্য পৌঁছালে শিক্ষার্থীরা তার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ঢাকা কলেজ সারাজীবন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগকে প্রটোকল দিয়ে আসছে অথচ ঢাকা কলেজকে বারবার অবমূল্যায়ন করা হয়েছে। আজ ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি থাকলে এ পরিস্থিতি তৈরি হতো না।
পরে ঢাকা কলেজের আবাসিক হল এলাকা থেকে প্রশাসনিক ভবনে আসেন লেখক। কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসসর এ টি এম মইনুল হোসেনসহ অন্যদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন তিনি। অধ্যক্ষের কক্ষের বাইরে তখনো শিক্ষার্থীরা লেখকের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিলেন।
প্রসঙ্গত, সোমবার রাত ১২টার দিকে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় ইট-পাটকেল নিক্ষেপের পাশাপাশি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। সংঘর্ষ থামাতে ২০-২৫ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ঢাকা কলেজের দুই শিক্ষার্থী রাত ১২টার দিকে নিউমার্কেটে কেনাকাটা করতে যান। সেখানে দুই দোকান মালিকের বাক-বিতণ্ডায় একজনের পক্ষ নেয়ায় মারধরের শিকার হন তারা। এর জেরে ঢাকা কলেজের কিছু শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে গেলে একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেধে যায়।
মঙ্গলবার সকাল থেকে আবারও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। এর ৫ ঘণ্টা পর ঘটনাস্থলে অবস্থান নিয়েছে পুলিশ। ইতোমধ্যে সংঘর্ষের মধ্যে পড়ে আহত হয়েছেন সাংবাদিকসহ কমপক্ষে ৪০ জন। সকাল থেকেই হামলার প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে রেখেছিল ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। এদিন সকালে নীলক্ষেত মোড় থেকে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় পর্যন্ত রাস্তায় ব্যারিকেড দেয় তারা। সকাল থেকে ব্যবসায়ীরাও দোকানপাট খোলার জন্য জড়ো হতে থাকে। এক পর্যায়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ষের রূপ নেয়।
এদিন দুপুরে সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুঃখের সাথে বলছি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নিয়ে মারামারি-সহিংসতা-সংঘর্ষ হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যবস্থা নিচ্ছে। ছাত্র, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, পুলিশ আহত। চরম ধৈর্য সহকারে কাজ করছে পুলিশ। কিছুক্ষণের মধ্যে পরিস্থিতি শান্ত হবে। যারা ঘটনা ঘটালো, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এর কিছুক্ষণ পরেই সড়ক ছেড়ে দিয়েছে ঢাকা কলেজের অধিকাংশ ছাত্র। খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থীই এখন আছে রাস্তায়। নিউমার্কেট এলাকায় সংঘর্ষস্থল ত্যাগ করেছে পুলিশের সাজোয়া যান। নিউমার্কেটের একপাশের সড়কে রিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল শুরু হয়েছে।
রমনা বিভাগের ডিসি সাজ্জাদুর রহমান একটু আগেই যমুনা নিউজকে জানান, এখন কোনো সংঘর্ষ নেই। কিছুক্ষণের মধ্যে পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হবে।
এরইমধ্যে মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলের মধ্যে ঢাকা কলেজের সব হল বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঢাকা কলেজ অধ্যক্ষের কার্যালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে এই ঘোষণা দেয়া হয়। ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ১৯ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত ঢাকা কলেজের সকল হল বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
/এমএন
Leave a reply