নাগরিক ঐক্যের সাথে বিএনপির দেড় ঘণ্টার বৈঠক শেষে দুই দলের নেতারাই ঐক্য নিয়ে ইতিবাচক কথা শোনালেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে ‘কার্যকর’ আলোচনা হয়েছে। অন্যদিকে, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ‘বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার পদক্ষেপ’ হিসেবে দেখছেন এই বৈঠককে।
মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর তোপখানা রোডে নাগরিক ঐক্যের কার্যালয়ের পাশে শিশু কল্যাণ পরিষদ ভবনের সম্মেলন কক্ষে নাগরিক ঐক্যের নেতাদের সঙ্গে বিএনপির রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে গণমাধ্যমে কথা বলেন দুই দলের নেতারা।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা একটা বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য এই আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করেছি। উদ্দেশ্য একটাই- এটাকে একটা যৌক্তিক পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া। আমাদের আজকে এই আলোচনা অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশে কার্যকরী আলোচনা হয়েছে। আমরা আশা করছি, এই আলোচনার রেশ ধরে বাকি দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনা ফলপ্রসূ হবে। আমরা আশা করছি যে, আমরা একটা যৌথভাবে আন্দোলনের সূচনা করতে পারবো এবং আমরা আশা করি, খুব শিগগিরই আমরা এই কাজটা করতে পারবো।
তিনি বলেন, আজকে দেশের মানুষ আশা করে আছে যে, বিরোধী দলগুলো একটা ঐক্যের মধ্যে এই সরকারের বিরুদ্ধে সফল কার্যকরী আন্দোলন গড়ে তুলবে, সেই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিবর্তন আনবে এবং সেই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে জনগণের একটা সরকার ও পার্লামেন্ট হবে। সেই লক্ষ্যে আমরা আজকে নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে কথা বলেছি।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য যেসব কাজ করা দরকার সবগুলো না হলেও মৌলিক বিষয়গুলো নিয়ে আজকের সভায় আমরা আলোচনা করেছি। এই মৌলিক বিষয়গুলোর একটা হচ্ছে এই সরকারের অধীনে একটা সুষ্ঠু, ভালো, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হতে পারে না। এটা এদেশের সব বিরোধী রাজনৈতিক দল বলেছে। এরই ভিত্তিতে এই সরকার চলে যাওয়ার পরে পরবর্তী নির্বাচন ও সরকার প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত যারা দায়িত্বে থাকবেন তাকে যে নামে ডাকি আমরা- একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করবেন এই দাবির ভিত্তিতে আমরা বিজয় পর্যন্ত লড়াই করব এই চিন্তায় কাজ করছিলাম। আজকে বৈঠকের প্রথমে আমরা সেই কথার পুনর্ব্যক্ত করেছি।
তিনি বলেন, এই আন্দোলনকে যৌক্তিক পরিণতির দিকে নিয়ে যাওয়া যায় কী করে, আমাদের দলগুলোর পারস্পারিক বোঝাপড়া-সমঝোতা, নিজেদের দলগুলোর কোনো সমস্যা, কোনো রাজনৈতিক সংকট এগুলো নিয়ে আমরা কথাবার্তা বলেছি। একটা বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার পদক্ষেপ হিসেবে আজকের এই বৈঠককে আমরা বিবেচনা করছি। আমি মনে, বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আমাদের ভূমিকা মুখ্য হবে।
কী আলোচনা হয়েছে বিস্তারিত জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, যে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা কথা বলেছি তার প্রধান বিষয় হচ্ছে- গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার। তার প্রধান বিষয় হচ্ছে, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সময়ে একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার। আমরা আলোচনা করেছি নিরপেক্ষ সরকার গঠনের পর নির্বাচন কমিশন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যে নির্বাচন হবে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব দলগুলোকে নিয়ে একটি মতামতের ভিত্তিতে একটা সরকার গঠন করা- যেটা আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন যে, একটা জাতীয় সরকার গঠন করা হবে। এগুলো আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল।
‘আরেক বিষয় ছিল যেটা হচ্ছে, আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে আটক করে রাখা হয়েছে তার মুক্তি যেটা মাহমুদুর রহমান মান্না সাহেব বলেছেন। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, গায়েবি মামলা ও যাদেরকে আটক করে রাখা হয়েছে তাদের মুক্তির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।’
বিকাল ৫টা থেকে দেড় ঘণ্টা এই রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। বৈঠকে বিএনপির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার সাথে ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম ও নির্বাহী কমিটির সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন। নাগরিক ঐক্যের নেতৃত্ব দেন দলটির সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নান। প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলটির উপদেষ্টা এসএম আকরাম, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোফাখখারুল ইসলাম নবাব, জিল্লুর চৌধুরী দিপু, যুগ্ম সম্পাদক ডা. জাহেদ উর রহমান প্রমুখ।
Leave a reply