তিনবেলা খেতে পারে না অনেক মানুষ, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই মূল চ্যালেঞ্জ

|

আসছে বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই মূল চ্যালেঞ্জ।

একদিন চালের দাম বাড়ে তো পরদিন ভোজ্যতেল; কাল আটা-ময়দার দাম বাড়লে পরশু বাড়ে ডালের দাম। এমন হুহু করে বাড়ছে দ্রব্যমূল্য। ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে হিমশিম খাচ্ছে দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষ। উত্তরণের উপায় বের করার উদ্যোগ আছে, কিন্তু নিস্তার নেই। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে বাজেটে পদক্ষেপ রাখতে চায় সরকার। খাদ্যপণ্যে নতুন করে বসছে না শুল্ক। তবে, ১০ টাকার খোলাবাজারের চাল হচ্ছে ১৫ টাকা। সহনীয় মাত্রায় ভর্তুকি নিজের কাছে নিতে চায় সরকার। কিন্তু তারপরও কাঙ্ক্ষিত স্বস্তি মিলবে কিনা, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়।

খুপড়ি ঘরের সামনে বসে নিজের পরিধেয় শাড়ির ছেঁড়া অংশ খুঁজে খুঁজে বের করছেন ছমিরন বেগম। তারপর সুই-সুতা দিয়ে সেই ছিদ্র বন্ধ করার চেষ্টা করেন। তিনবেলা খাবার যেখানে জোটে না, ছমিরনের কাছে নতুন শাড়ি সেখানে বিলাসিতার নামান্তর। জানালেন, গত রোজার ঈদ থেকে কোনো কাজ পাচ্ছেন না তিনি। বাড়ি ভাড়াও আটকে আছে।

কিছু অংশ নষ্ট হয়ে যাওয়া করলা এবং আলু বাজার থেকে কম দামে এনেছেন সেলিনা খাতুন। সবকিছুর দাম বেশি তাই; নয় জনের সংসারে পেট ভরে খেয়ে বেঁচে থাকা কঠিন। তিনি বললেন, গরীব মানুষের এখন মরণ। আগে তিন বেলা খেতাম, এখন একবেলা।

তিন বেলা খাওয়া যেন ভুলেই গেছেন, শতবর্ষী আছিয়া বিবি। ছেলের মৃত্যুর পর দেখার তেমন কেউ নেই। বয়স্ক ভাতার কার্ড পুড়ে গেছে, তাই বন্ধ হয়ে গেছে ভাতাও। জানালেন, এক কেজি চালের দাম ৬০ টাকা হলে দুইবেলা খাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব না তার পক্ষে।

দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষদের কাছে এখন আতঙ্কের নাম মূল্যস্ফীতি। আয়ের সঙ্গে খাপ খাইয়ে টিকতে পারছে না সাধারণ মানুষ। দামের আগুনে পুড়ছে মানুষ, কিন্তু সরকারি হিসেবে তার প্রতিফলন নেই। বেসরকারি তথ্যে মূল্যস্ফীতির হার আকাশচুম্বী। আশপাশের সব দেশেই মূল্যস্ফীতির হার বেশি হলেও রহস্যজনক কারণে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বাংলাদেশ।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেন, মুদ্রাস্ফীতির হার যত বাড়ছে তার চেয়ে বেশি বাড়ছে গরীবদের মুদ্রাস্ফীতির হার। বাংলাদেশে ডলারের মান পুনরুদ্ধার না করতে পারলে মুদ্রাস্ফীতি আরও বেড়ে যাবে।

বাজেটে খাদ্যপণ্যে শুল্ক বসাতে চায় না সরকার। কিন্তু বিশ্ববাজারে বাড়ছে পণ্যের দাম। সেক্ষেত্রে আমদানি নির্ভর পণ্যে ভর্তুকি না দিলে স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যাবে দাম। আকবর আলি খান বলেন, গরীব মানুষের মূল্যস্ফীতির হার আলাদাভাবে হিসেব করলে দেখা যাবে, ৩০-৪০ শতাংশ হারে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। এত উচ্চ মূল্যস্ফীতি সামাল দেয়ার সক্ষমতা আমাদের দেশের দরিদ্র মানুষের নেই।

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

বিপুল সংখ্যক মানুষের এখন ত্রাহি অবস্থা। সহনীয় দামে পণ্য পৌঁছে দিতে চায় সরকার। কিন্তু সেই সুযোগ কতটা আছে, সে প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দ্রব্যমূল্যের যে রেখা তা অনেক মানুষের জন্য নেতিবাচক হয়ে গেছে, যা তার সামর্থ্যের বাইরে। দুই মাস আগে এক কেজি চাল যে কিনেছে ৫০ টাকায়, এখন কিনতে হচ্ছে ৬০ টাকায়। তবে আমার মনে হয়, চাল এবং তেলের দাম এখন আর বাড়ছে না, বরং ধীরে হলেও কমছে।

শুধু খাদ্যপণ্যই নয়, এরই মধ্যে ধাপে ধাপে বাড়ছে সেবা ব্যয়। গ্যাস-বিদ্যুতে ভর্তুকি ভোক্তার কাঁধে তুলে দেয়া হচ্ছে, এতে আরও চাপে পড়বে সাধারণ মানুষ।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply