গুলশান কুমার থেকে মুসওয়ালা, বলিউডে জেঁকে বসেছে মাফিয়াভীতি

|

গত ২৯ মে পাঞ্জাবি র‍্যাপার সিধু মুসওয়ালা হত্যাকাণ্ডের পর নতুন করে আবারও আলোচনায় মাফিয়াভীতি। ইতোমধ্যেই মুসওয়ালাকে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন লরেন্স বিষ্ণোই নামের এক গ্যাংস্টার। সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই অরিজিৎ সিংসহ বলিউডের অনেকেই জানিয়েছেন মাফিয়াদের সাথে তাদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা। সম্প্রতি মৃত্যুর হুমকি পেয়েছেন সুপারস্টার সালমান খান ও তার বাবা সেলিম খান। আবারও কি বলিউডে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো মাফিয়া চক্র?

১৯৯৭ সালের ঘটনা। প্রকাশ্যে মন্দিরের সামনে হত্যা করা হয় জনপ্রিয় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টি সিরিজের প্রতিষ্ঠাতা গুলশান কুমারকে। প্রথম গুলিটাই লেগেছিল কপালে, নিশ্চিত মৃত্যু। পোস্টমর্টেমে এই বলিউড প্রযোজকের শরীর থেকে ১৬টি বুলেট পাওয়া যায়। এর আগে, কুখ্যাত গ্যাংস্টার আবু সালেম হুমকি দিয়েছিলেন চাহিদা অনুযায়ী টাকা না পেলে গুলশানের শরীরে ১৬টি গুলি থাকবে, বাস্তবে হয়েছিলও তাই।

২০০০ সালে মুক্তি পায় হৃতিক রোশনের ‘কাহো না পেয়ার হ্যায়’, যা মুক্তির পরই হয় ব্লকবাস্টার হিট। সিনেমা মুক্তির এক সপ্তাহের মাথায় হৃতিকের বাবা পরিচালক রাকেশ রোশনের ওপর দুজন অস্ত্রধারী হামলা চালায়। তার গাড়ি লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালানো হয়। সে যাত্রায় প্রাণে বেঁচে যান রাকেশ। হামলার পর এ ব্যাপারে রাকেশ বলেছিলেন, অস্ত্রধারীরা শুধু আমাকে খুন করতেই আসেনি। এসেছিল গোটা বলিউডের জন্য একটা সতর্কসংকেত পাঠাতে।

তথাকথিত এ ‘সতর্কতা’ বলিউডের সবচেয়ে ভয়ানক ব্যাধি। এর সূত্রপাত অবশ্য পাঁচ দশক আগে। ১৯৭০ সালে ভারত সরকার বলিউডকে ব্যাংক থেকে ঋণ দেয়া বন্ধ করে দেয়। আর এ সুযোগটাই নেয় মাফিয়ারা। পরিচালকেরা তখন বিভিন্ন প্রাইভেট কোম্পানি, ধনী ব্যক্তিদের দ্বারস্থ হন সিনেমায় লগ্নীর জন্য। এ সময়টাতেই হাজি মাস্তান, দাউদ ইব্রাহিম, আবু সালেম, ছোটা শাকিল, ছোটা রাজনের মতো মাফিয়ারা শেকড় গেড়ে বসেন বলিউডে। নিজেদের কালোটাকা সিনেমায় লগ্নি করে বিনিময়ে অনেক ফায়দা লুটে নিতো তারা।

মাফিয়া ও বলিউড হাতে হাত ধরেই চলছিল বেশ কয়েক যুগ। কিন্তু ১৯৯৯ সালে ভারত সরকার বলিউডকে ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে স্বীকৃতি দিলে স্বার্থে টান পড়ে মাফিয়াদের। দ্রুত বাড়তে থাকে প্রযোজকের সংখ্যা। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠে মাফিয়ারাও। হুমকি দিয়ে ফোন, চাঁদাবাজি এমনকি শিল্পীদের বাড়িতে হামলার ঘটনাও ঘটেছে অনেকবার।

মাফিয়াদের হুমকির মুখে পড়েন অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, বোমান ইরানি, সোনু সদ, সনু নিগমসহ অনেকেই। কালের পরিক্রমায় এই মাফিয়াদের অনেকটাই দমন করতে সক্ষম হয়েছে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মাফিয়াদের কেউ মারা পড়েছেন এনকাউন্টারে, কেউ জেলে, কেউ বা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন।

তবে, গত ২৯ মে পাঞ্জাবি র‍্যাপার সিধু মুসওয়ালার হত্যাকাণ্ডে নতুন করে আলোচনায় আসে মাফিয়াভীতি। সম্প্রতি মৃত্যুর হুমকি পেয়েছেন বলিউডের ভাইজান সালমান খান ও তার বাবা সেলিম খান। বেনামী এক চিঠির মাধ্যমে তারা মৃত্যুর হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যে সালমান খানের সার্বিক নিরাপত্তা বাড়িয়েছে মুম্বাই পুলিশ। সব মিলিয়ে আবারও শঙ্কিত হয়ে উঠেছে বলিউড, আবারও জেঁকে বসেছে মাফিয়া আতঙ্ক।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply