বিশ্বের প্রায় সব দেশের অর্থমন্ত্রীই বাজেট অধিবেশনে ব্রিফকেস নিয়ে পার্লামেন্টে ঢোকেন। বাংলাদেশেও এই রীতি রয়েছে, যা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। তবে এই ব্রিফকেস নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। কী থাকে সেই ব্রিফকেসে?
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা আকবর আলি খানের বই ‘বাংলাদেশে বাজেট: অর্থনীতি ও রাজনীতি’-তে ব্রিফকেসের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। বইটি থেকে জানা যায়, শিল্পবিপ্লবের পর ইংল্যান্ডের অর্থনীতি অনেক বড় হয়ে যায়। বাজেটবিষয়ক প্রস্তাবগুলো শুধু একটা মানিব্যাগে সংকুলান করা সম্ভব হচ্ছিল না। মানিব্যাগের জায়গায় তাই আসে ব্রিফকেস।
আকবর আলি খানের বইটিতে বাজেট প্রস্তাবের দিন ব্রিফকেস ব্যবহারের আরেকটি কারণ উল্লেখ করা হয়। সেটি হচ্ছে- বাজেটে কোন কর বাড়বে বা কোন কর কমবে, তার গোপনীয়তা বজায় রাখা অপরিহার্য। বাজেটের কোনো তথ্য জেনে ব্যবসায়ীরা রাতারাতি তার ব্যবহার করতে পারেন। তাই প্রস্তাবগুলো গোপন রাখার স্বার্থে ব্রিফকেসে করে আনা হয়।
জানা যায়, বাজেট ব্রিফকেসের এই রীতি শুরু হয় ১৮ দশক থেকে। প্রথম শুরু হয় যুক্তরাজ্য থেকে। বাজেটপ্রধানকে এ ব্রিফকেস খুলে বাজেট পেশ করতে বলা হতো। ১৮৬০ সালে ব্রিটেনের বাজেটপ্রধান উইলিয়াম ই গ্ল্যাডস্টোন ‘লাল একটি স্যুটকেসে’ করে বাজেটসংক্রান্ত নথি নিয়ে আসেন। সেই স্যুটকেসের ওপর সোনা দিয়ে রানির মুখের আদলের ছাপ দেয়া ছিল। ওই একই ব্যাগ বহু সরকারের আমলেই ব্যবহার করা হয়।
ভারতীয় উপমহাদেশ ভাগের পর ১৯৪৮ সালের ১৬ মার্চ পূর্ববাংলা প্রদেশে প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশন বসে। জানা যায়, হামিদুল হক চৌধুরী সে অধিবেশনেই ১৯৪৮-৪৯ সালের বাজেট পেশ করেন। সেই সময়ও ‘ব্রিফকেস রীতি’ মানা হয়েছিল। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ প্রথম বাজেট উপস্থাপন করেন ১৯৭২ সালের ৩০ জুন। একই সঙ্গে ১৯৭১-৭২ ও ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করেছিলেন। তখনো তার হাতে ছিল ‘বাজেট ব্রিফকেস’।
প্রথা অনুযায়ী ‘লাল ব্রিফকেস’ হাতে বাজেট পেশ করতে সংসদে ঢোকেন অর্থ বিভাগের প্রধান। তবে এই রহস্যময় ব্রিফকেসের রং সব সময় লাল ছিল না, অনেক সময়ই তা বদলেছে। তবে রং যা-ই হোক না কেন, এই ব্রিফকেসকে বাজেটের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। আসলে বাজেট শব্দটির উৎপত্তিই যে এই ব্রিফকেসের দিকে নির্দেশ করে। বাজেট শব্দটি এসেছে পুরনো ফরাসি শব্দ ব্যুজেট (বোগেট) থেকে। ব্যুজেটের অর্থ হলো থলে বা ব্যাগ। অতীতে থলেতে ভরে দেশের আয়-ব্যয়ের হিসাব আইনসভা বা সংসদে আনা হতো বলে একে ‘বাজেট’ নামে অভিহিত করা হয়।
তবে অক্সফোর্ড ইংলিশ ডিকশনারির বর্ণনায় বলা হয়েছে, ষোড়শ শতাব্দীতে ‘একজনের বাজেট খোলার’ কথাটি ব্যবহৃত হয় এমন অর্থে- কেউ এমন কিছু প্রকাশ করছে, যা গোপন, সম্ভবত কিছুটা সন্দেহজনকও। অনেকটা থলে থেকে কৌশল বের করা হয় এমন।
ইউএইচ/
Leave a reply