টাঙ্গাইলে স্কুল-কলেজের পাশে বখাটে পেলেই গ্রেফতার: পুলিশের কঠোর সর্তক বার্তা

|

গোবিন্দাসী উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল ফটকে পুলিশের সতর্কবার্তা।

স্টাফ করেসপনডেন্ট, টাঙ্গাইল:

টাঙ্গাইলে ভূঞাপুরে উঠতি বয়সী তরুণ-যুবক বখাটেদের উৎপাত বেড়েই চলছে। ছোট-খাট চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ তারা জড়িয়ে পড়ছে নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। বিশেষ করে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার সামনে ও রাস্তা-ঘাটে তরুণ বখাটের উৎপাতে মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সক্রিয় হয়ে উঠছে কিশোর গ্যাংগুলোও।

এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডরোধ ও গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ নিয়েছে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর থানা পুলিশ। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তারা সাঁটিয়ে দিয়েছেন সতর্কতামূলক পোস্টার।

শুক্রবার (১০ জুন) সকালে উপজেলার গোবিন্দাসী উচ্চ বিদ্যালয়ের মূল ফটকের দুই পাশে এমনই একটি সর্তকমূলক বার্তার লিফলেট দেখা গেছে।

পুলিশের পক্ষ থেকে সাঁটানো কঠোর এ সর্তক বার্তায় লেখা রয়েছে- স্কুল-কলেজ ও মাদরাসা চলাকালীন সময়ে বা ছুটি হওয়ার সময়ে যেকোনো স্কুলের পাশে ও পাশের দোকানে আড্ডা দেয়া এবং অহেতুক ঘোরাফেরা সম্পূর্ণ নিষেধ। ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আজ থেকে যদি কোনো স্কুল-কলেজ বা মাদরাসার সামনে বখাটে ছেলে পাওয়া যায় তাহলে তাদেরকে গ্রেফতার করে আইনত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা জানান, রাস্তা-ঘাটে বা স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে বখাটে অনেক ছেলেরা উক্ত্যক্ত ও ইভটিজিংমূলক আচরণ করে থাকে। তাদের এমন অপরাধমূলক কাণ্ডে প্রতিবাদ করতে গেলেও অপহরণ বা ধর্ষণের শিকার হতে হয়। তাই অনেক কিছু সহ্য করে মেনে নিয়ে তাদেরকে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হয়।

তারা আরও জানান, স্কুলের গেটে পুলিশের সর্তকমূলক লিফলেট সাঁটানোর বিষয়টি সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে পুলিশ। এতে করে বখাটের উৎপাত কমে আসবে। 

অভিভাবকরা জানান, পুলিশের এমন উদ্যোগকে আমরা সাধুবাদ জানাই। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে পুলিশ তৎপর হলে বখাটেরা আর মেয়েদের ইভটিজিং করার সাহস পাবেনা। ভূঞাপুর থানার ওসিকে ধন্যবাদ জানান তারা।

জানা গেছে, এই বখাটে তরুণরা দলবদ্ধ হয়ে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্রীদের যাওয়া আসার পথে ইভটিজিং ও বিভিন্ন ধরনের কু-প্রস্তাবও দিয়ে থাকে। আর এসবে রাজি না হলে অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটাচ্ছে তারা।

সম্প্রতি, ভূঞাপুরের উপজেলার নিকরাইল ইউনিয়নের সিরাজকান্দি দাখিল মাদরাসার ছাত্রীদের মাদরাসায় আসা যাওয়ার পথে স্বপন ও সাগরসহ বেশ কয়েকজন বখাটের শিকার হয় ওই মাদ্রাসার ছাত্রীরা।

শুধু তাই নয়, ছাত্রীদের কমনরুমেও উঁকিঝুঁকি দেয় বখাটেরা। এ নিয়ে মাদরাসার এক শিক্ষক প্রতিবাদ করলে উল্টো ওই শিক্ষকের ওপর হামলা চালিয়ে রড ও ক্রিকেট খেলার স্ট্যাম্প দিয়ে পিটিয়ে আহত করে বখাটেরা।

এর আগে, গত ৫ মে উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের বানিয়াবাড়ি এলাকায় প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া এক স্কুলছাত্রীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যায় ব্যবসায়ী নাজমুল প্রধানের ছেলে মো. ফারুক শেখ (১৯)। পরে তাকে সিরাজগঞ্জের এক আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে দফায় দফায় ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় (৭ মে) ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রীর বাবা বাদি হয়ে ভূঞাপুর থানায় ধর্ষণ ও অপহরণের মামলা দায়ের করলে অভিযুক্ত ফারুকসহ তার সহযোগী বিশাল হোসেনকে (২০) গ্রেফতার করে ভূঞাপুর থানা পুলিশ। পরে (৮ মে) তাদেরকে টাঙ্গাইল আদালতে প্রেরণ করা হয়।

সতর্কতামূলক বার্তার ব্যাপারে ভূঞাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম বলেন, বখাটেদের অপরামূলক কর্মকাণ্ডরোধে এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রথমে গোবিন্দাসী উচ্চ বিদ্যালয়ে সাঁটানো হয়েছে। বিট পুলিশিং মাধ্যমে স্কুলে স্কুলে গণসচেতনতার লক্ষ্যে পথসভা করা হবে।

তিনি আরও জানান, সর্তকমূলক বার্তা লিফলেট উপজেলার প্রতিটি স্কুলেই দ্রুত সময়ের মধ্যে সাঁটানো ও পোস্টারিংয়ের উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়া বখাটেদের বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ করলে তাদের বিরুদ্ধে আইগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এজন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply