দীর্ঘ ১১ বছর পর শুরু হচ্ছে জনশুমারি। সাত দিন ডিজিটাল পদ্ধতিতে হবে জনগণনা। করোনা সংক্রমণ এবং ট্যাব কেনার ক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠায় বিলম্ব হয় এই উদ্যোগ। শুধু দেশের মানুষই নয়, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশিদেরও সংখ্যা গণনা করবে সরকার। বিশ্লেষকরা বলছেন, গণনার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা দরকার। পরিকল্পনামন্ত্রীর ধারণা, নির্ভুল পরিসংখ্যান পাল্টে দিতে পারে দেশের উন্নয়ন চিত্র।
বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা কতো, এর হালনাগাদ সঠিক উত্তর কারো কাছে নেই। কারণ, অনেক আগেই শেষ হয়েছে জনগণনার নিদিষ্ট সময়। দেরিতে হলেও শুরু হচ্ছে জনশুমারি ও গৃহগণনা। অর্থাৎ, দেশের মোট জনসংখ্যা এবং খানা জরিপ পরিচালনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ১৫ থেকে ২১ এই সাত দিন ধরে চলবে তথ্য সংগ্রহ। সাধারণ মানুষেরও ধারণা, চাহিদা, প্রয়োজন, মাথাপিছু আয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেতে জনশুমারির প্রয়োজন। এছাড়া পূর্বেকার হিসেব মতে দেশের মোট জনসংখ্যা সাড়ে ১৬ কোটি। জনশুমারির পর যদি দেখা যায়, জনসংখ্যা ১৭ বা ১৮ কোটিতে পৌঁছেছে, তবে বাড়তি মানুষের জন্য খাবার ও অন্যান্য চাহিদা মেটানোর জন্যও পরিসংখ্যানের সঠিক ধারণা জরুরি বলে মনে করেন অনেকেই।
জনশুমারিতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে করা হবে তথ্য সংগ্রহ। এ কাজে শুমারিকর্মী হিসেবে সারাদেশে নিয়োজিত থাকবেন ৩ লাখ ৭০ হাজার গণনাকারী। এছাড়া থাকবেন সুপারভাইজার এবং বিবিএসের প্রায় ৭০ হাজার কর্মচারী। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, গণকের দায়িত্ব খুব ছোট দায়িত্ব। তাকে গড়ে মাত্র একশো পরিবার গুনতে হবে তাকে। ঘরের বিবরণও আমরা নেবো যে, কী রকম ঘরে এই গৃহস্থ বাস করেন।
১৯৭৪ সালে অনুষ্ঠিত হয়, দেশের প্রথম জনশুমারি। তারপর ১৯৮১ সালে দ্বিতীয়, ১৯৯১ সালে তৃতীয় ২০০১ সালে চতুর্থ এবং ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম শুমারি। খাদ্যপণ্যের চাহিদা এবং যোগানের সঠিক তথ্য নিশ্চিত হতে এই নিদিষ্ট সময়ে শুমারির বিকল্প নেই।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, চাল, গম, ভুট্টা, কলা, মরিচ কোথায় কোনটি উৎপন্ন হয় সেই হিসেব করতে আরেকটি শুমারি করি আমরা, কৃষিশুমারি। সেই পরিসংখ্যানকে এই জনশুমারির সাথে মিলিয়ে দেখলে আমরা বুঝতে পারবো কত মানুষ কত ধান, কত মানুষ কত গম আছে আমাদের।
২০১১ সালের জনশুমারি অনুযায়ী প্রতিবছর দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ৩৭ ভাগ। সেই হিসেবে ২০২২ সালের জনসংখ্যা হবার কথা ১৮ কোটি। এর সাথে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যোগ হয়েছে, যার সংখ্যা ১১ লাখ। বলা হচ্ছে, জনশুমারি এবং খানা জরিপ কাজে নির্ভুল তথ্য-উপাত্ত তুলে আনতে হবে।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বয়স্ক জনগোষ্ঠির জন্য সরকারের আগামী দিনে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি এবং শিশুদের জন্য বিভিন্ন সহায়তা কার্যক্রম রয়েছে। জেলাভিত্তিক, খানাভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করলে সেসব কার্যক্রমের জন্য পরিকল্পনামাফিক কাজ করার সুযোগ তৈরি হয়।
দশ বছর নয়, হালনাগাদ তথ্য উপাত্তের জন্য পাঁচ বছর পর পর এই কার্যক্রম পরিচালনা দরকার বলেও জানান পরিকল্পনামন্ত্রী। জনশুমারির তিন মাসের মাথায় জনগণকে মোট জনসংখ্যা জানিয়ে দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
/এম ই
Leave a reply