পানি কমলেও সিলেট-সুনামগঞ্জে বানভাসীদের দুর্ভোগ চরমে

|

এমন বন্যা দেখেনি আগে, বানভাসীদের হাহাকার।

বানের জলে ভাসছে সিলেট ও সুনামগঞ্জ। সীমাহীন দুর্ভোগে বন্যাকবলিত লাখ লাখ মানুষ। সিলেটে বৃষ্টিপাত কমলেও কমেনি বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ। শহরটির সড়ক ও বাসাবাড়িতে এখনও হাঁটুপানি। তবে, ওসমানী মেডিকেলের নিচতলা থেকে পানি নেমে গেছে। তবে ভয়াবহ অবস্থায় রয়েছে কোম্পানীগঞ্জের মানুষ। সেখানে আশ্রয়কেন্দ্রে জায়গা নেই। সেই সাথে, এসে পৌঁছেনি সরকারি সহায়তা।

গতকাল (১৮ জুন) থেকেই সিলেটে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে। তবে উপজেলাগুলো এখনও ভাসছে পানিতে। আশ্রয়কেন্দ্রে রয়েছে অসংখ্য মানুষ। সুনামগঞ্জেও বন্যার একই চিত্র। ঘরবাড়ি-রাস্তাঘাট ডুবে থাকায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগে আছে বানভাসীরা। বন্যা মোকাবেলায় কাজ করছে সেনা ও নৌবাহিনী এবং বিজিবি সদস্যরা। বন্যা কবলিত মানুষেরা জানালেন, কেউ হয়তো নিজ বাড়ি ছেড়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু যার বাড়িতে থাকছেন তার অবস্থাও নাজুক।

সুনামগঞ্জের একজন বর্ষীয়ান ব্যক্তি বলছিলেন, এরকম দুর্যোগের মুহূর্তে আশ্রয়, খাদ্য এবং পানীয়ের যোগান সবচেয়ে জরুরি। এছাড়া ভয়াবহ বন্যায় যারা এখনও বিভিন্ন এলাকায় আটকে আছেন তাদের উদ্ধারকার্য যত দ্রুত সম্ভব পরিচালনা করাও জরুরি। জানা গেছে, নৌবাহিনীর আরও বেশ কিছু সদস্য সুনামগঞ্জে আটকে থাকা বন্যাদুর্গতদের উদ্ধার অভিযানে যোগ দিতে যাচ্ছে।

হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জে এখন বেশিরভাগ আবাসস্থলই ডুবে গেছে পানিতে। উঁচু বাড়ির চালে অবস্থান নিয়ে রয়েছে এখনও বানভাসী মানুষ। সেখানে মানুষ ও গবাদিপশুর আশ্রয় হয়েছে একইসাথে। কেউ কেউ নৌকায় সাময়িকভাবে থাকার ব্যবস্থা করেছে। বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলে যমুনা নিউজ জানতে পেরেছে, গতকাল পর্যন্ত সুনামগঞ্জের বেশ কিছু এলাকায় পৌঁছেনি কোনো ত্রাণ। লম্বা সময় ধরে সড়কপথে যোগাযোগ, বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকার এরকম সময়ে ত্রাণ ও সাহায্যের আশায় প্রহর গুনছে অসংখ্য মানুষ।

তবে আজ রোববার (১৯ জুন) থেকে নৌবাহিনীর কার্যক্রম বেশ জোরালোভাবেই শুরু হচ্ছে। বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে আটকে পড়া বানভাসী মানুষদের নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযান আরও শক্তিশালী করতে যাচ্ছে নৌবাহিনী।

বন্যার পানিতে শতভাগ নিমজ্জিত কোম্পানীগঞ্জের অবস্থা ভয়াবহ। এই থানার কোনো বাড়িতেই নেই বসবাসের পরিস্থিতি। আশ্রয়কেন্দ্রে মানবেতর জীবনযাপন করছে মানুষ। শ্রেণিকক্ষের মতো একটি ঘরে ৪০-৫০ জনের মতো মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। পালাক্রমে ঘুমোতে হচ্ছে তাদের। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে জায়গা নেই বলে রাস্তায় তাঁবু তৈরি করেও থাকছেন অনেক মানুষ। পাথর অধ্যুষিত এলাকা বলে এখানে অনেক ট্রাক রয়েছে, যা ব্যবহৃত হচ্ছে মানুষের আশ্রয়ের জন্য। শামিয়ানা টাঙিয়ে ট্রাকের উপরও থাকছেন বানভাসী মানুষ।

কোম্পানীগঞ্জে খাদ্যাভাব এখন চরমে। যেভাবে মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে, তাদের খাবার নিয়ে আসার কোনো সুযোগ ছিল না। অনেকেই জানিয়েছে, গত দুইদিনের বন্যায় তাদের ঘরে থাকা খাবার ভেসে গেছে। এখন ডাঙায় উঠেও অনাহারে-অর্ধাহারে দিন যাপন করতে হচ্ছে তাদের। সরকারি ত্রাণ এখনও পৌঁছেনি কোম্পানীগঞ্জের আশ্রয়কেন্দ্রে। বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধির সাথে কথা বলে যমুনা নিউজ জেনেছে, ত্রাণসামগ্রী এসে না পৌঁছানোয় তারা প্রকাশ করেছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। বানভাসী মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হলেও খাদ্য সহায়তা দিয়ে তাদের পাশে দাঁড়াতে পারছেন না জনপ্রতিনিধিরা। কোম্পানীগঞ্জে সেনাবাহিনী আরও মানুষ উদ্ধারের জন্য অভিযান পরিচালনা করছে। সেই সাথে, বানভাসীদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানিয়েছে সেনাবাহিনী।

আরও পড়ুন: সিলেটে বন্যার মধ্যেই মাঝরাতে ডাকাত আতঙ্ক, রাত জেগে পাহারা এলাকাবাসীর

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply