স্টোকসের ‘বাজবল’ পরিকল্পনা সত্যি করে রুট-বেয়ারস্টোর ব্যাটে অবিস্মরণীয় জয়

|

ছবি: সংগৃহীত

এজবাস্টন টেস্টে টস জিতে ইংলিশ অধিনায়ক বেন স্টোকস বলেছিলেন, তিনি ব্যাট করবেন না। প্রথমে বল করে রান তাড়া করবেন, সে যত রানই হোক। নির্ভিকভাবে ব্যাট করার যে ‘বাজবল’ থিওরি স্টোকসদের মাথায় গেঁথে দিয়েছেন নতুন কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, তার কী দারুণ অনুবাদই না ঘটালেন জো রুট ও জনি বেয়ারস্টো! প্রথম সাড়ে তিনদিন ভারতের আধিপত্যে দর্শক হয়ে থাকা ইংল্যান্ড বিশ্বের অন্যতম সেরা ফর্মে থাকা এই দুই ব্যাটারের ‘বাজবল’ ব্যাটিংয়ে জিতে নিলো ৭ উইকেটের অবিস্মরণীয় জয়। আর ২-২ এ ড্র হলো ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজ।

চতুর্থ ইনিংসে ৩৭৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৪র্থ দিনের শেষেই জয়ের ভিত রচনা করেন রুট ও বেয়ারস্টো। শেষ দিনে জয়ের জন্য ইংলিশদের প্রয়োজন ছিল ১১৯ রান, আর ভারতের ৭ উইকেট। কিন্তু শেষদিনে এমনই আগ্রাসী ব্যাট করেছেন এই দুই সেঞ্চুরিয়ান যে, প্রায় পুরো ম্যাচেই আধিপত্য বিস্তার করে রাখা ভারতকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি ৫ম দিনে। আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলা নতুন ইংল্যান্ডের সাথে একইভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চলা বুমরাহ বাহিনী বোলিং ও ফিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে কিছুটা রক্ষণাত্মক হওয়ার মাশুলই গুনেছে। এক টেস্টের জন্য দায়িত্বে আসা বুমরাহ হয়তো ব্যক্তিগত সাফল্যে ভাস্বর হয়েছেন, রিশাভ পান্ত, রবীন্দ্র জাদেজাদের লড়াই ম্যাচে এগিয়ে রেখেছে ভারতকে; কিন্তু জীবনের সেরা ফর্মে থাকা বেয়ারস্টো-রুটদের অতিমানবীয় ব্যাটিংয়ের সামনে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়া যে এখন যেকোনো টেস্ট খেলুড়ে দেশের জন্যই ভীষণ কঠিন হওয়ার কথা!

এই পরাজয় ভুলতে কষ্ট হবে বুমরাহর। ছবি: সংগৃহীত

১০৭ থেকে ১০৯, এই ২ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেট হারিয়ে কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলে ইংল্যান্ড। এরপর জো রুট সাবলীল ব্যাটিংই করতে থাকেন। আর অবিশ্বাস্য ফর্মে থাকা বেয়ারস্টো দেখে নিচ্ছেন পিচের হাল হকিকত। তবে মোহাম্মদ সিরাজের বলে স্লিপে হনুমা বিহারির কাছে মাত্র ১৪ রানে জীবন পান বেয়ারস্টো। সেই ক্যাচ মিসের পর আবার রিশাভ পান্তের হাতেও বন্দি হতে হতে বেঁচে যান বেয়ারস্টো। শেষ ৮ টেস্টে ৬ সেঞ্চুরি হাঁকানো ব্যাটারের প্রতি যে এতটা উদারতা দেখানো যায় না, তা বুঝতে পারেনি ভারত। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও দুর্দান্ত সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন ইয়র্কশায়ারের এই ব্যাটার। ১৫টি বাউন্ডারি ও ১টি ওভার বাউন্ডারিতে ১৪৫ বলে ১১৪ রানের ঝলমলে ইনিংস খেলে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছেন বেয়ারস্টো।

রুটের স্কুপ পাল্টে যাওয়া ইংল্যান্ডের প্রতিচ্ছবি। ছবি: সংগৃহীত

অন্যদিকে, জো রুট অব্যাহত রেখেছেন টেস্টে বিশ্বসেরা ব্যাটারের ফর্ম। অধিনায়কত্ব হারালেও দলের প্রতি নিবেদনে বিন্দুমাত্র ঘাটতি যে তার নেই, সেটাও প্রমাণ করে চলেছেন প্রতিনিয়ত। বেয়ারস্টোর সাথের জুটিতে স্ট্রোকের ফুলঝুরিতে পিছিয়ে ছিলেন না রুট। বরং শিল্পিত আগ্রাসনের সংজ্ঞা নিরূপণ করে দলকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দেয়ার লক্ষ্যেই যেন ধ্যানীর ন্যায় অবিচলিত ঢঙে রুট খেললেন নিশ্ছিদ্র এক ইনিংস। খেললেন ট্রেডমার্ক কাভার ড্রাইভ, ব্যাকফুট পাঞ্চ, জোরালো হুক, শিল্পিত লেগ গ্লাস এবং ব্যাটিং অভিধানের সকল শট। পেসারের বলে স্কুপে ছয় মেরে অভিধানকেও চ্যালেঞ্জ করলেন রুট। ১৯ চার ও ১ ছয়ে ১৭৩ বলে ১৪২ রানকে ম্যাচের গুরুত্ব, সংশয় তো বটেই; কেবল ব্যাটিংয়ের দৃষ্টিকোণ থেকে টেস্টের আধুনিক গ্রেট ইনিংসের মর্যাদা দেয়াই যায়।

আর এত এত অবিশ্বাস্য পারফরমেন্সের কাছে ম্লান হয়ে গেল রিশাভ পান্ত, রবীন্দ্র জাদেজার পাল্টা আক্রমণের জোড়া সেঞ্চুরি; কিংবা স্টুয়ার্ট ব্রডের এক ওভারে ব্রায়ান লারাকে টপকে যাওয়া ভারতের ১০ম ব্যাটার বুমরাহর তাণ্ডব। টেস্টের এক বর্ণাঢ্য বিজ্ঞাপনই যেন হয়ে রইলো বেন স্টোকসের ‘বাজবল’ পরিকল্পনায় ক্ষণে ক্ষণে রং পাল্টানো এজবাস্টন টেস্ট। পাল্টে যাওয়া ইংল্যান্ডের বিজ্ঞাপন হিসেবেও পিছিয়ে থাকবে না এজবাস্টন।

/এম ই


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply