বোয়ালমারী (ফরিদপুর) প্রতিনিধি:
ফরিদপুরের বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল ওহাব এর বিরুদ্ধে শারীরিক নির্যাতন, বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি ও এ বিষয় মুখ খুললে ক্রসফায়ারের হুমকি দেয়ার অভিযোগ করেছেন এক ব্যবসায়ী।
বুধবার (৬ জুলাই) পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বরাবর ন্যায় বিচার পাওয়ার প্রত্যাশায় লিখিত অভিযোগটি দায়ের করেন বোয়ালমারী রেলস্টেশন রোডস্থ মহু মার্কেটের ব্যবসায়ী মো. মাসুদ আলম।
ডিআইজি বরাবর করা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, গত ৫ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কাজে ব্যস্ত ছিলেন ব্যবসায়ী মো. মাসুদ আলম। এ সময় বোয়ালমারী থানার উপ-পরিদর্শক মামুন-আর-রশিদ ব্যবসায়ী মাসুদ হোসেনের প্রতিষ্ঠানে এসে ‘ওসি সাহেব তলব করেছেন’ বলে পুলিশের গাড়িতে তুলে নিয়ে যান। থানায় পৌঁছানোর পর ওসি আব্দুল ওহাব তার নাম ঠিকানা জানতে চায়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে ওসি ওহাব অফিসের সিসি ক্যামেরা ও দরজা বন্ধ করে মোটা বেত দিয়ে বেধড়ক পেটাতে শুরু করেন ওই ব্যবসায়ীকে এবং তার কাছে ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এছাড়া বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে দেয়ার ভয়ও দেখানো হয় তাকে। পরে ব্যবসায়ী মাসুদ হোসেন তার স্ত্রীকে সংবাদ দিলে তিনি ১ লক্ষ টাকা দিয়ে স্বামীকে থানা থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান।
অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, এ বিষয়ে কারও কাছে মুখ খুললে মাসুদকে ক্রসফায়ারের ভয়ও দেখান ওসি মো. আব্দুল ওহাব। পরে থানা থেকে বের হয়ে বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগ চিকিৎসা নেন ব্যবসায়ী মাসুদ হোসেন।
ব্যবসায়ী মাসুদ জানান, আমার দাদা কর্তৃক আমাকে দলিল করে দেওয়া একটি সম্পত্তি নিয়ে আমার বাবার সাথে ঝামেলা রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কোর্টে একটি দেওয়ানি মামলা চলমান। ধারণা করছি আদালতে সুবিধা করতে না পেরে আমার পিতা তার স্বার্থে ওসিকে দিয়ে আমাকে নাজেহাল করাতেই মোটা অংকের ঘুষ দিয়েছে। যে কারণে ওসি আব্দুল ওহাব থানায় ডেকে নিয়ে আমাকে নির্যাতন করেন। তিনি বলেন, ওসির নির্যাতনের সময় আমার চিৎকার থানায় উপস্থিত সবাই কম-বেশি শুনতে পেয়েছে।
বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ফাতেমা নুসরাত জানান, দুপুরের দিকে স্ত্রীকে নিয়ে মাসুদ আলম নামের একজন চিকিৎসা নিতে আসেন। তার হাতে-পায়ে ও বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। তবে সেগুলো কীসের আঘাত সে বিষয়ে ধারণা নেই তার।
বোয়ালমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল ওহাব অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করে বলেন, ব্যবসায়ী মাসুদ হোসেনের পিতার সাথে তার একটি ঝামেলা চলছে। বিষয়টি জানতে পেরে তাকে থানায় ডেকেছিলাম, সে সময় তার পিতাও উপস্থিত ছিলেন। দুজনের ভেতর মীমাংসা করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ব্যবসায়ী মাসুদ ছাড় দিতে অস্বীকার করলে তাদের আদালতে যেতে বলি। পরে তারা পিতা পুত্র থানা থেকে চলে যান।
অভিযোগকারীর পিতা হেমায়াত হোসেন বলেন, আমার ছেলের সাথে জমি নিয়ে একটা বিরোধের বিষয়ে ওসি সাহেবকে বললে তিনি মাসুদকে ডেকে জমি ফেরত দেওয়াসহ আমার কাছে মাফ চাইতে বলে। ছেলে না শুনলে ওসি সাহেব তাকে কয়েকটা বারি দেন। পরে আমি ঠেকিয়েছি।
ফরিদপুর জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) সুমন কর বলেন, ব্যবসায়ী মাসুদ আলম ফোন করেছিল, তখন বিষয়টি জানতে পারি। বোয়ালমারীর ওসিকে ফোন করে তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি শারীরিক নির্যাতন ও চাঁদাবাজির কথা অস্বীকার করেছেন।
তবে যেহেতু ব্যবসায়ী মাসুদ আলম অভিযোগ করেছেন, অবশ্যই তদন্ত হবে। এবং তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করারও আশ্বাস দেন তিনি।
/এডব্লিউ
Leave a reply