যেসব ঘটনা বরিস জনসনের পতন ডেকে এনেছে

|

বরিস জনসন। ছবি: সংগৃহীত।

এখনও তিন বছর হয়নি। বরিস জনসনের নেতৃত্বে জাতীয় নির্বাচনে ১৯৮৭ সালের পর সবচেয়ে বড় বিজয় নিয়ে ক্ষমতা এসেছিল যুক্তরাজ্যের কনজারভেটিভ পার্টি। আর এখন মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে তাকে। যেসব ঘটনায় বরিস জনসনের মসনদ তছনছ হয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে বিবিসি ও রয়টার্সের প্রতিবেদনে।

ক্রিস পিনচারকে নিয়ে বিতর্ক

কনজারভেটিভ পার্টির পার্লামেন্ট সদস্য ও সাবেক ডেপুটি চিফ হুইপ ক্রিস পিনচারকে ঘিরে বিতর্কিত কয়েকটি ঘটনা বরিস জনসনের এই পরিণতির পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে। গত ২৯ জুন লন্ডনের একটি ক্লাবে গিয়েছিলেন তিনি। পিনচারের ভাষ্য, ওই ক্লাবে তিনি অত্যধিক মদ পান করেছিলেন। এমনকি এ ঘটনা তার নিজের কাছেই ছিল বিব্রতকর। এছাড়া ওই ক্লাবে দুই ব্যক্তিকে হয়রানির অভিযোগ উঠে পিনচারের বিরুদ্ধে। এরপর তার বিরুদ্ধে পুরনো কিছু অভিযোগ সামনে আসে।

গেলো ফেব্রুয়ারিতে কনজারভেটিভ পার্টির ডেপুটি চিফ হুইপ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল পিনচারকে। ডাউনিং স্ট্রিটের ভাষ্য ছিল, পিনচারকে নিয়োগ দেয়ার আগে তার বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলো সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না বরিস জনসন। কিন্তু বিবিসির প্রতিবেদনে উঠে আসে, পিনচারকে ঘিরে ওঠা অভিযোগগুলো সম্পর্কে জানতেন প্রধানমন্ত্রী।

পরে বরিস জনসন স্বীকার করেন, পিনচারের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো জানতেন তিনি। তাকে ডেপুটি চিফ হুইপ নিয়োগের জন্য ক্ষমাও চান তিনি।

পার্টিগেট
যুক্তরাজ্যে তখন করোনা মহামারির প্রথম ঢেউ চলছিল। কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে ডাউনিং স্ট্রিটের বাগানে আয়োজন করে মদের পার্টি। ইমেইল করে আমন্ত্রণ জানানো হয় অথিতিদের। পরে যা ফাঁস হয়ে পড়ে। এ ঘটনা পার্টিগেট নামে পরিচিতি পায়। এ ঘটনায় ক্ষমা চাইতে বাধ্য হন্য বরিস জনসন।

এছাড়া ২০২০ এর জুনে নিজের জন্মদিন উপলক্ষ্যে ডাউনিং স্ট্রিটে সরকারি বাসভবনে এক পার্টিতে যোগ দেন বরিস জনসন। এ নিয়ে কঠোর সমালোচনার মুখোমুখি হন তিনি।

ওয়েন প্যাটারসন বিতর্ক
গত বছরের অক্টোবরে কনজারভেটিভ পার্টির তৎকালীন সংসদ সদস্য ওয়েন প্যাটারসনকে ৩০ দিনের জন্য বহিষ্কারের সুপারিশ করে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের একটি কমিটি। তাদের ভাষ্য ছিল, প্যাটারসন অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ–সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করেছেন।

কিন্তু এতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় বরিস জনসন নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ পার্টি। তার বহিষ্কারাদেশ স্থগিতের পক্ষে ভোট দেন তারা। এমনকি প্যাটারসনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো কীভাবে তদন্ত করা হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখতে নতুন কমিটি গঠন করা হয়।
এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এক পর্যায়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন প্যাটারসন। পরে বরিস জনসনও স্বীকার করেন, এই ঘটনায় তার ভূমিকা সঠিক ছিল না।

জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি
দেশটিতে নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধিও বরিস জনসনের এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী। চলতি বছর যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ১ শতাংশে। যদিও এর জন্য পুরোপুরি দায়ী নন বরিস সরকার। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়ায় বড় ভূমিকা রেখেছে।
এদিকে গত এপ্রিলে লেবার পার্টির নেতা স্যার কেইর স্টার্মার অভিযোগ করে বলেন, কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ জীবনযাত্রার ব্যয় সংকটের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাজ্য।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply