বঙ্গভবনের দরবার হলে পবিত্র ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করলেন রাষ্ট্রপতি

|

বঙ্গভবনের দরবার হলে ঈদের নামাজ আদায়রত রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ।

রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট মো. আবদুল হামিদ রোববার (১০ জুলাই) সকালে বঙ্গভবনের দরবার হলে পবিত্র ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করেন। রাষ্ট্রপতির পরিবারের সদস্য ও বঙ্গভবনের কর্মকর্তাগণ রাষ্ট্রপতির সাথে ঈদের জামাতে অংশ নেন।

নামাজ শেষে মুনাজাতে দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও ঐক্য কামনা করা হয়। বঙ্গভবন জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা সাইফুল কাবীর মোনাজাত পরিচালনা করেন। পরে রাষ্ট্রপতি দেশবাসীর উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, সবাইকে ঈদ মোবারক। পবিত্র ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষ্যে আমি দেশবাসীসহ বিশ্বের সকল মুসলিম ভাইবোনদের জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ। মহান আল্লাহর প্রতি গভীর আনুগত্য ও সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় ভাস্বর পবিত্র ঈদ-উল-আযহা। এ উৎসবের সাথে মিশে আছে চরম ত্যাগ ও প্রভুপ্রেমের পরাকাষ্ঠা। কুরবানি আমাদের মাঝে আত্মদান ও আত্মত্যাগের মানসিকতা সঞ্চারিত করে, আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর সাথে আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি করে নেয়ার মনোভাব ও সহিষ্ণুতার শিক্ষা দেয়।

রাষ্ট্রপতি আরও বলেন- প্রিয় দেশবাসী, বিগত দুই বছরের করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই এর সাথে এখন যুক্ত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্কট। এসব যুদ্ধ-সংঘাতের কারণে সমগ্র বিশ্ব অর্থনীতি চাপের মুখে পড়েছে, বেড়েছে মূল্যস্ফীতির চাপ। সরকার এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে বিভিন্ন প্যাকেজ প্রণোদনা প্রদানসহ বহুমুখী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। কৃষি ও শিল্পসহ উৎপাদনশীল প্রতিটি খাতের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতেও সরকার সর্বাত্মক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বন্যা মোকাবেলায় বন্যাদুর্গত, অস্বচ্ছল ও নিম্নআয়ের মানুষের দুর্ভোগ লাঘবেও বিভিন্ন সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত আছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়েও উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। কেউ যাতে ঈদের আনন্দ হতে বঞ্চিত না হয় সে লক্ষ্যে আমি দেশের বিত্তবান ও স্বচ্ছল ব্যক্তিবর্গকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। ত্যাগের শিক্ষা আমাদের ব্যক্তি জীবনে প্রতিফলিত হলেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে শান্তি ও সৌহার্দ্য।

রাষ্ট্রপতি বলেন, এবারের ঈদের আগেই দেশবাসীর কাছে মহাখুশির উপলক্ষ্য হয়ে এসেছে গৌরবের নিদর্শন পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন। এর মাধ্যমে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের ২১ জেলার তিন কোটি মানুষের বহুমুখী যোগাযোগের অপার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আগামী বছর সেতুতে রেল সংযোগ স্থাপিত হলে দেশের সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় এক নতুন মাত্রা যোগ হবে। পদ্মা সেতুর ফলে দেশের অর্থনীতিতে যে ইতিবাচক অগ্রগতির সুযোগ সৃষ্টি হলো তা সমগ্র দেশবাসীর জন্যই বিশেষ আনন্দের বিষয়।

বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি বলেন- প্রিয় দেশবাসী, সকল সংকট মোকাবিলা করে নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যাবে আমাদের দেশ- এ প্রত্যাশা সবার। কিন্তু এর জন্য দরকার সকলের সম্মিলিত প্রয়াস। বিশেষ করে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে যথাযথ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে; সঠিকভাবে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। পবিত্র ঈদ-উল-আযহার মর্মার্থ অনুধাবন করে সমাজে শান্তি ও কল্যাণের পথ রচনা করতে আমাদের সংযম ও ত্যাগের মানসিকতায় উজ্জীবিত হতে হবে। আমি আশা করি, আপনারা সকলেই সরকার নির্ধারিত স্থানে কুরবানি সম্পন্ন করবেন এবং যথাসময়ে কুরবানির বর্জ্য অপসারণে সচেষ্ট থাকবেন। পবিত্র ঈদ-উল-আযহা আমাদের জন্য বয়ে আনুক কল্যাণ, সবার মধ্যে জেগে উঠুক ত্যাগের আদর্শ। আমি আপনাদের সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণ কামনা করছি। মহান আল্লাহ আমাদের সকলের সহায় হোন, আমিন। জয় বাংলা। খোদা হাফেজ, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply