জাপানে আশঙ্কাজনক হারে সাগরে কমছে টুনা মাছের পরিমাণ। এ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে স্থানীয় জেলেদের মধ্যে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রের তলদেশে জীববৈচিত্র্যে এই পরিবর্তন এসেছে। বৈশ্বিক উষ্ণতার জেরে নষ্ট হচ্ছে মাছের খাবার, কমছে উৎপাদন। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
সাগরে বড়শি ফেলে বিশেষ কায়দায় ধরা হচ্ছে টুনা মাছ। জাপানের স্থানীয় ভাষায় যা কাতসুয়ো বলে পরিচিত। দেশটির রোজকার খাবার তালিকায় এ মাছের বিকল্প নেই। সুশি থেকে শুরু করে বিশেষ ধরনের সস তৈরিতেও ব্যবহার করা হয় মাছটি।
কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাগরে আশঙ্কাজনক হারে কমেছে এ মাছের সংখ্যা। পাশাপাশি এর আকারেও পরিবর্তন লক্ষ্য করছেন স্থানীয় জেলেরা।
জাপানের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী খাবার কাতসুয়োবুসি। যা তৈরি হয় কাতসুয়ো বা টুনা মাছ দিয়ে। মাছের পরিমাণ কমে যাওয়ার বিষয়টি তাই ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয় বাসিন্দা ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীদের। বলছেন, টুনা মাছের সাথে সাথে বিলুপ্ত হবে ঐতিহ্যবাহী খাবার, যা জাপানের হাজার বছরের পুরানো ইতিহাস বহন করে।
কসুকে কিতামুরা নামের এক রেস্টুরেন্ট ম্যানেজার বলেন, ক্রেতাদের কাতসুয়ো দিতে পারছি না এমন পরিস্থিতি এখনও আসেনি। তবে মাছের পরিমাণ যে হারে কমতে শুরু করেছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারি। কাতসুয়ো ছাড়া জাপানের ঐতিহ্যবাহী কাতসুয়োবুসি খাবার তৈরি করা আসলেই কঠিন হয়ে পড়বে।
সাগরে মাছ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে জলবায়ু পরিবর্তনকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা। বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতায় সাগর তলদেশে কমছে মাছের খাদ্য। যা প্রভাব ফেলছে উৎপাদনে। একই সাথে অতিরিক্ত মাছ ধরাও নিয়ন্ত্রণে আনার পরামর্শ তাদের।
জাপানের কৃষিবিজ্ঞানী হিরোয়ুকি উকেদা বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে উপকূলীয় এলাকায় ফাইটোপ্ল্যাংকটনের জরুরি পুষ্টি উপাদানগুলো ক্রমেই শুকিয়ে যাচ্ছে। এর ফলে ফাইটোপ্ল্যাংকটন খেয়ে বড় হওয়া কাতসুয়ো কম খাবার পাচ্ছে। ফলে উৎপাদনও কমে যাচ্ছে। সাগরে মাছ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ মূলত বৈশ্বিক উষ্ণতা।
গবেষকরা বলছেন, শীতকালে সমুদ্রের উপরিভাগের তাপমাত্রা গেল চার দশকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। আর জাপানের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে কোচি শহরে যে পরিমাণ মাছ মিলছে তা ১৯৮০ সালের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগ।
এটিএম/
Leave a reply