কুড়ি বছরের খাদিজা যখন ৮ মাসের অন্তঃসত্তা, তখন রাখাইনে নেমে আসে জাহান্নামের আগুন। যখন প্রথম মা হওয়ার স্বপ্ন আর রোমাঞ্চে বিভোর থাকার কথা, তখন মিয়ানমারের সেনারা হামলে পড়ে খাদিজাদের ওপর। চোখের সামনে খুন হন স্বামী। পুড়িয়ে দেয়া হয় ঘর। এরপরই দেশ ছেড়ে অজানার উদ্দেশে যাত্রা মায়ের সাথে। পালিয়ে বাঁচতে চান, আর বাঁচাতে চান পেটে থাকা সন্তানটি।
বাংলাদেশে আশ্রয় মিলতে পারে- এই আশায় ছুটতে থাকেন। এক পর্যায়ে মৃত্যুপুরী রাখাইন থেকে পালিয়ে পা রাখতে সক্ষম হন বাংলাদেশের মাটিতে। এতেই যেন নতুন করে আবার জীবন পেলেন খাদিজা। ইন্ডিয়া টুডে’কে বলছিলেন তার অনুভূতি। “পুরো রাখাইন জ্বলছে। আমাদের ঘরটিও পুড়ে গেছে। কোনো মতে পেটের সন্তানসহ জীবন নিয়ে মিয়ানমার থেকে পালাচ্ছিলাম। এক পর্যায়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকলাম। এখানেই আমার একটা মেয়ে সন্তান হয়েছে। মেয়ের নাম রেখেছি শেখ হাসিনা।”
কেন নাতনীর নাম বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নামে রাখা? ব্যাখা দিলেন খাদিজার মা আলুম বেগম। “আমরা অনেক কষ্ট নিয়ে বাংলাদেশে এসেছি। মেয়েটি অন্তঃসত্তা ছিল। এখানে এসে তার একটা বাচ্চা হয়েছে। নবজাতকের নাম শেখ হাসিনার নামে রেখেছি, কারণ তিনি আমাদেরকে নতুন জীবনের আশা দিয়েছেন। এখন আমরা জীবনে একটু হলেও শান্তির কথা ভাবতে পারছি।”
৬ সদস্যের পরিবারের মধ্যে শুধু আলুম বেগম ও তার মেয়ে খাদিজাই বেঁচে আছেন। স্বামী ও মেয়ের জামাইসহ অন্যাদেরকে হারিয়েছেন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে। খাদিজার মতো হাজারো অন্তঃসত্তা নারী গত তিন সপ্তাহে আশ্রয় নিয়েছেন কক্সবাজারের বিভিন্ন শরণার্থী ক্যাম্পে।
পালিয়ে আসা ৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেয়ায় বিশ্বের দরবারে প্রশংসিত হচ্ছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে শরণার্থীদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। গত সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমাদের দেশ গরীব হতে পারে, কিন্তু আমরা অসহায় মানুষকে আশ্রয় দিচ্ছি। প্রয়োজনে তাদের সাথে আমাদের খাবার ভাগ করে খাবো।’
/কিউএস
Leave a reply