রাশিয়া-ইউক্রেন চুক্তির ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে আটা-ময়দার বাজারে। নতুন করে আর দাম বাড়েনি এই পণ্যের, বরং পাইকারি পর্যায়ে দাম কমেছে। বিক্রেতারা বলছেন, খুব শিগগিরই খুচরা পর্যায়ে দাম কমতে শুরু করবে। আটা-ময়দার দাম কমার সুফল মিলবে চালের বাজারেও। চুক্তির ইতিবাচক প্রভাব পড়বে ভোজ্যতেল ও সার আমদানিতে, এমন অভিমত বিশ্লেষকদের। আর পর্যাপ্ত মজুদ গড়ে তুলতে দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
গত এপ্রিল থেকে বিশ্বের গমের বাজারে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশের গমের অন্যতম উৎস রাশিয়া-ইউক্রেন। যুদ্ধের কারণে এই দুটি দেশসহ সবশেষ ভারত থেকে গম আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। ফলে স্থানীয় বাজারে লাফিয়ে দাম বাড়তে থাকে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যানুযায়ী, গত এক বছরে আটা-ময়দার দাম ৫০ থেকে ৫৬ শতাংশ বেড়েছে।
এই পরিস্থির মধ্যে গত শুক্রবার (২২ জুলাই) কৃষ্ণসাগর দিয়ে খাদ্যশস্য রফতানির জন্য ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এরই প্রভাবে বিশ্ববাজারে গমের দাম করার আভাস মিলেছে। আন্তর্জাতিক বাজার পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাগুলোর তথ্য বলছে, এরই মধ্যে বিশ্ব বাজারে গমের দাম কমেছে ৩ থেকে ৪ শতাংশ। বাংলাদেশের বাজারেও এমন পরিস্থিতিতে গমের দাম কমার আশার আলো দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
এরই মধ্যে পাইকারি পর্যায়ে দাম কমার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। কয়েকটি ব্র্যান্ডের দামও কমেছে। ৫০ কেজি প্রতি বস্তার দাম ২১০০ টাকা থেকে নেমে ১৭০০ টাকায় এসেছে। নতুন করে আর দাম বাড়বে না বরং এখন দফায় দফায় কমতে থাকবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
বাংলাদেশ বিশ্বের পঞ্চম গম আমদানিকারক দেশ। প্রতিবছর গমের চাহিদা ৭৫ লাখ টনের বেশি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুুদ্ধের ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ মাত্র ৪০ লাখ টন গম আমদানি করতে পেরেছে। চুক্তির ফলে বিশ্ববাজারে গমের পাশাপাশি সারসহ আরও কিছু পণ্যের দাম কমতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। স্থানীয় বাজারে আটা-ময়দার দাম কমে যাওয়ার সুবাতাস চালের বাজারেও মিলবে।
এনিয়ে সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, আটা-ময়দার দাম বেড়ে যাওয়াতে অধিক সংখ্যক মানুষ চালের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছেন। তাই চালের দাম বাজারে কমছিল না। এখন যদি রাশিয়া-ইউক্রেনের এই চুক্তির ফলে বাজারে গমের দাম কমে তাহলে মানুষ আবারও আটা-ময়দার দিকে ঝুঁকবেন। আমাদের ধারণা, এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে চালের বাজারেও।
বাংলাদেশে গমের প্রায় ৯০ শতাংশই আসে বেসরকারি খাতের মাধ্যমে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি মাসে ২৮ হাজার টন গম আমদানির ঋণপত্র চূড়ান্ত হয়েছে। সরকারি গুদামে আছে ১ লাখ ৬৪ হাজার টন।
এসজেড/
Leave a reply