ভারতের কোথাও যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত। সাথে পাইলট নিহত। এমন খবর ক’দিন পরপরই শোনা যায়। অথচ ভারত কোনো দেশের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত নয়। যুদ্ধে না থাকা কোনো দেশে নিয়মিতভাবে এত সংখ্যক ফাইটার জেট বিধ্বস্ত হওয়ার নজির বিশ্বের অন্য কোথাও আছে কিনা তার অবশ্য কোনো পরিসংখ্যান নেই।
সর্বশেষ আজ গুজরাট অঙ্গরাজ্যের কুচ জেলায় একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটেছে। এতে পাইলট নিহত হয়েছে। বিমানটি জামনগর বিমানঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করে বলে জানা গেছে।
২০১২ সালে রাজ্যসভার এক অধিবেশনে দেশটির তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী একে অ্যান্থনি জানিয়েছিলেন, রাশিয়ার কাছ থেকে কেনা ৮৭২টি মিগ যুদ্ধবিমানের মধ্যে গত ৪০ বছরে ৪৮২টি নানাভাবে দুর্ঘটনায় পড়ে। এর মধ্যে অনেকগুলো বিধ্বস্ত হয়েছে। শুধু মিগ দুর্ঘটনায় ১৭১ জন পাইলট প্রাণ হারিয়েছেন। সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছেন ৩৯ জন। এবং বিমানবাহিনীতের চাকরি করা অন্যান্য পদের লোক মারা গেছেন ৮ জন। রাশিয়া থেকে কেনা বিমান দুর্ঘটনায় চার দশকে প্রাণহানি ২১৮।
এর বাইরেও রয়েছে বহু ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ফ্রান্সের তৈরি যুদ্ধবিমানও রয়েছে ভারতীয় বিমান বাহিনীর। সেগুলোও নানা সময় শিকার হয়েছে নানা দুর্ঘটনার।
গত বছর ভারতের প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাস ভামরে লোকসভার অধিবেশনে জানান, ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ২৯টি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়েছে’ বছরে গড়ে ছয়টি করে। এসব ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা অনেক।
মাত্রাতিরিক্ত দুর্ঘটনার শিকার হওয়া এবং এত পাইলটদের প্রাণহানির কারণে ভারতীয় বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলোকে বলা হয়, ‘উড়ন্ত কফিন’ বা ‘বিধবা তৈরির যন্ত্র’।
এত দুর্ঘটনার কারণ কী?
এত বেশি দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে হয়রান ভারতীয় এভিয়েশন ও সামরিক বিশেষজ্ঞরা। প্রথম সমস্যাটি হচ্ছে, বিমানগুলোর বয়স বেড়ে যাওয়া। প্রচুর যুদ্ধবিমান রয়েছে যেগুলো ৬০ এর দশকে তৈরি। ধীরে ধীরে পুরাতন বিমানগুলোকে বহর থেকে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হলেও এই উদ্যোগ পুরোপুরি সফল হচ্ছে না। প্রতিবেশি দেশ চীন আকাশ প্রতিরক্ষা ও সামরিক খাতে যে পরিমাণ অগ্রসর হচ্ছে সে তুলনায় ভারতের বাজেট যথেষ্ট নয়।
রাশিয়ার তৈরি বিমানগুলো বেশি দুর্ঘটনায় পড়ছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়ে থাকে, নিয়মিত সংস্কার কাজের অংশ হিসেবে যন্ত্রাংশ সরবরাহের ক্ষেত্রে রাশিয়ান প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ ধীল গতির। ফলে নির্দিষ্ট সময়ে বিমানগুলোর সংস্কার করতে না পারায় ত্রুটিপূর্ণ অবস্থায়ই প্রশিক্ষণে ব্যবহার করতে হয়।
অতিরিক্ত প্রশিক্ষণের চাপও এত বেশি যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনার একটি কারণ বলে মনে করা হয়। কার্নেগে এনডোমেন্ট ফর ইন্টারনেশনাল পিস এর বেঞ্জামিন লেমবেথ বলেন, ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ অনেক বেশি হয়ে থাকে, এবং সেগুলো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিবেশি চীন ও পাকিস্তানের চেয়ে ভারতীয় পাইলটদের বেশি প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।
প্রতিকূল আবহাওয়া এবং পরিবেশও একটি কারণ। ইউরোপ বা পশ্চিমা অন্যান্য দেশের মতো উপমহাদেশের আকাশ বিমান-বান্ধব নয়। এসব দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে পাখি একটি বড় কারণ। ভারতের ১০ শতাংশ বিমান দুর্ঘটনা পাখির কারণে হয়ে থাকে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় পাখির সংখ্যা বেশি থাকে। ভারতের বেশিরভাগ বিমানবন্দর ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় হওয়ার কারণে ওড়া বা অবতরণের সময় পাখি সংক্রান্ত দুর্ঘটনা ঘটে। ব্যবস্থাপনায় অযোগ্যতা ও দুর্নীতিকে অতিরিক্ত দুর্ঘটনার জন্য দায়ী করেছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।
Leave a reply