স্টাফ করেসপনডেন্ট, কুড়িগ্রাম:
কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় বাল্যবিয়ে করতে গিয়ে জনতার হাতে গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন ঠাকুরগাঁও জেলার রাণী শংকৈল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ইসকে আব্দুল্লাহ (৫৪)। মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের বড়াইকান্দি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে জনতার রোষানল থেকে ওই কর্মকর্তাকে উদ্ধার করেন রৌমারী সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালু।
স্থানীয়দের দাবি, প্রথম স্ত্রীর ভুয়া অনুমতি সনদ ও কিশোরীকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে করতে আসায় ওই কর্মকর্তাকে গণধোলাই দেয়া হয়েছে। অভিযুক্ত ইসকে আব্দুলাহ দিনাজপুর সদরের সুইহারী (খালপাড়া) গ্রামের মৃত. হাফিজ উদ্দিনের ছেলে এবং তিনি ঠাকুরগাঁও জেলার রাণী শংকৈল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
শৌলমারী ইউনিয়নের ওয়ার্ড সদস্য ইউনূছ আলী বলেন, ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় শৌলমারী এমআর স্কুল এন্ড কলেজ কেন্দ্র পরিদর্শক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ইসকে আব্দুল্লাহ। এর সুবাদে পরীক্ষা কেন্দ্রেই পরিচয় হয় এক এসএসসি পরীক্ষার্থীর সাথে। পরে ওই শিক্ষার্থীর কাছ থেকে মোবাইল নাম্বারও নেন ওই কর্মকর্তা।
এরপর বিভিন্ন সময়ে মোবাইলে কল দিয়ে তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন তিনি। প্রেমের সম্পর্ক গভীর হলে মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যার দিকে তিন সদস্যের বরযাত্রী নিয়ে বিয়ে করার উদ্দেশে উপস্থিত হন ওই শিক্ষার্থীর বাড়িতে। বিধি মোতাবেক প্রথম স্ত্রীর ভুয়া অনুমতির প্রত্যয়নপত্র নিয়ে এসেছেন। তার সাথে আসা দুই খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা কুড়িগ্রাম সদর খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব হাসান এবং নাগেশ্বরী উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
তবে তারা বিয়ের সাক্ষী হতে রাজি হননি। এমনকি তার কোনো স্বজনও আসেননি। এ সময় ওই শিক্ষার্থীর বিয়ের বয়স না হওয়ায় তর্ক-বিতর্কের সৃষ্টি হওয়ায় স্থানীয়রা ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে গণধোলাই দেয়। জনতার রোষানল থেকে উদ্ধার করে অন্যত্র পাঠিয়ে দেন রৌমারী সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালু।
রৌমারী সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালু বলেন, ওই কর্মকর্তা বিয়ে করতে এসে জনতার রোষানলের শিকার হয়েছেন। পরে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে ঘটনাস্থল থেকে তাদের উদ্ধার করে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে।
অভিযুক্ত ওই কর্মকর্তার স্ত্রী কামরুন আরার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, তাদের ঘরে দুই কন্যা সন্তান ও এক ছেলে সন্তান রয়েছে। এক মেয়ের বিয়েও দেয়া হয়েছে। আরেক মেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত এবং ছেলে সন্তান দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে।
তিনি আরও বলেন, তার স্বামী কিছুদিন ধরে দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য তাকে বিভিন্নভাবে চাপ দেন এবং বিয়েতে সম্মতি না দেয়ায় তাকে মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করেন। এ নিয়ে দিনাজপুর থানায় যৌতুক ও নারী নির্যাতন আইনে মামলা করা হয়েছে।
অভিযুক্ত রাণী শংকৈল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা ইসকে আব্দুল্লাহ বলেন, আমার প্রথম স্ত্রীর দু’টি অপারেশনের কারণে সে শারীরিকভাবে অনেক অসুস্থ। ফলে আমি দ্বিতীয় বিয়ে করতে আসছি। মেয়ের বয়স কম, এটা আমার জানা ছিল না। তাই একটু হট্টগোল হয়েছে। বুধবার (১০ আগস্ট) কোর্টের মাধ্যমে বিয়ের কাজ সম্পন্ন করবেন বলেও জানান তিনি।
ওই কর্মকর্তার সাথে বরযাত্রী হিসেবে আসা কুড়িগ্রাম সদর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুব হাসান ও নাগেশ্বরী উপজেলা খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজেদুর রহমান বলেন, তিনি তার এক আত্মীয়র বাড়িতে দাওয়াতের কথা বলে আমাদেরকে রৌমারীতে নিয়ে আসেন। পরে দেখি তিনি বিয়ে করার উদ্দেশে এসেছেন। এ সময় আমাদের দু’জনকেই বিয়ের সাক্ষী হতে বলেন। আমরা সরকারি কর্মকর্তা, বাল্য বিয়েতে সাক্ষী হতে রাজি না হওয়ায় স্থানীয়দের সাথে হট্টগোলের সৃষ্টি হয়। এ সময় রৌমারী সদর ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শালুর সহযোগিতায় আমরা ঘটনাস্থল থেকে সরে আসি।
ওই শিক্ষার্থীর বাবা বলেন, কুড়িগ্রাম সদরে ৩০ শতক জমিতে বাড়ি করে দেবেন। ১০ ভরি স্বর্ণালংকারসহ মোটা অঙ্কের টাকা দেয়ার লোভ দেখিয়ে আমার মেয়েকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এই সুবাদে তার প্রথম স্ত্রী’র ভুয়া অনুমতি সনদসহ দু’জন লোককে সাথে নিয়ে বাড়িতে আসেন। এ সময় গ্রামবাসীর সাথে বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে হাতাহাতি হয়।
এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, রাণী শংকৈল উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা দু’দিনের ছুটিতে রয়েছেন। এ ঘটনার বিষয়ে কিছুই জানেন বলে জানান তিনি।
Leave a reply