রাজধানীর অন্যতম ব্যস্ততম কারওয়ান বাজার মোড়ে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য নির্মাণ করা হয় ত্রিভুজ আকৃতির স্তম্ভ। যাতে বিলবোর্ড বসানোর জন্য লাগানো হয়েছিল লোহার বিশাল কাঠামো। যা এখন পরিত্যক্তই বলা চলে। তা থেকে ঝুঁলে পড়েছে কোনো কোনো অংশ। বিপজ্জনকভাবে দুলছে ওই লোহার কাঠামোটি।
কিন্তু এর নিচেই খেলাধুলা করতে দেখা যায় ছোট বাচ্চাদের। অবিশ্বাস্য মনে হবে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মাথার ওপর কত বড় বিপদের খড়গ ঝুঁলছে তা দেখলে।
স্তম্ভের কাছে বাচ্চা নিয়ে আসা এক যুবক বললেন, এটা ঝুঁকিপূর্ণ। বাচ্চারা বিকেল বেলা এখানে আসে, একটু খেলাধুলা করতে। এটা যদি ঝুঁলে পড়ে তাহলে অনেক বাচ্চাদের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
রাজধানীতে একের পর এক দুর্ঘটনা, প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। তারপরও নগরের অব্যবস্থাপনা কিছুতেই কমছে না। কোনো প্রকার নিরাপত্তা বেস্টনি ছাড়াই রাজধানীতে চলছে ভবন তৈরি, ভবন ভাঙা; এমনকি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। আর এর মধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ। এসব দেখার যেন কেউ নেই।
কারওয়ান বাজার রেল ক্রসিংয়ের ঠিক পাশের ১২তলা ভবনটি ভাঙা হচ্ছে। দায়িত্ব পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শাহ আলী ট্রেডার্স। কোনো প্রকার নিরাপত্তা বেস্টনী ছাড়াই ক্রেন দিয়ে ভাঙা হচ্ছে ভবনটি। অথচ পাশেই পুরোদমে চলছে একটি হোটেল। আর হোটেলের উপরের টিনশেড ঘরে থাকেন হোটেলের প্রায় ৩০ জন কর্মচারী। একটু এদিক-ওদিক হলেই ঘটতে পাড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
হোটেলটির কর্মচারী ও ক্রেতারা জানালেন ঝুঁকির কথা। বললেন, কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না।
শুধু হোটেল না, ভবনের ঠিক পেছনে রয়েছে একটি এতিমখানা। ইতোমধ্যে ভবনটি ভাঙতে গিয়ে ওই ভবনের গ্লাসসহ ভেতরের বেশকিছু জিনিসের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এতিমখানার শিশুরাও রয়েছে ঝুঁকিতে।
অনেকটা দম্ভ করেই ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান বলছে, ক্ষয়ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ দেবেন তারা। শাহ আলী ট্রেডার্সের তত্বাবধায়ক মোহাম্মদ সগির জানান, যত ক্ষতি হোক কোম্পানি ক্ষতিপূরণ দেবেন। এখন পর্যন্ত মানুষের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আর হবেও না।
কয়েকদিন আগে রাজধানীর উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের কাজের সময় ক্রেন থেকে গার্ডার পড়ে নিভে গেছে ৫ জনের জীবন প্রদীপ। এতো কিছুর পরও কমেনি নির্মাণ কাজের অব্যবস্থাপনা। নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, সরকারি নজরদারির অভাবে দিন দিন জন্য ভয়াবহ হয়ে উঠছে রাজধানী।
নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ বলেন, শুধু ঢাকা শহর নয়, সারা বাংলাদেশেই যত জায়গাতেই ভবন ভাঙা-নির্মাণ কাজগুলো হয়, সবক্ষেত্রেই সর্বোচ্চা নিরাপত্তা দিতে হবেই। আর নিরাপত্তা দেয়া সবার আগে রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র যদি সে জায়গায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেন, তাহলে যারা কাজ করেন তারা তো গাফিলাতি করবেই।
উন্নয়ন প্রকল্প, ভবন ভাঙা এমনকি ভবন তৈরি সবক্ষেত্রে যদি নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ করা না হয়, তাহলে দিন দিন পরিস্থিতি আরও ভয়ানক হবে বলেও মনে করেন তিনি।
/এমএন
Leave a reply