মৌলভীবাজার প্রতিনিধি
মৌলভীবাজারের মনু নদ ও ধলাই নদীর গ্রাম প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে কমলগঞ্জ, কুলাউড়া ও রাজনগর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের অন্তত ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানি বন্দী হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজারো মানুষ। ডুবে গেছে আউস ধান, সবজি ক্ষেতসহ গ্রামীণ সড়ক। আকস্মিক বন্যায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকাবাসী।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, দুদিনের টানা বৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ধলাই নদীর বাঁধ ভেঙে কমলগঞ্জ পৌরসভা, রহিমপুর, মুন্সিবাজার ও আদমপুর ইউনিয়নের লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের ভোলানগর, কুলাউড়া উপজেলার শরিফপুর ও টিলাগাও ইউনিয়নেও বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে গেছে।
এছাড়া কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সিবাজার ইউনিয়নের করিমপুর, সুনানন্দপুর, বাসুদেবপুর, জালাল পুর, রহিমপুর ইউনিয়নের লক্ষীপুর, আদমপুর ইউনিয়নের কেওরালি ঘাট, বনগাও, ঘোড়ামাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
মনু নদের বাঁধ ভেঙে কুলাউড়া উপজেলার শরিফপুর ও টিলাগাও দুই ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। শরীফপুরের বটতলা থেকে চাঁনপুর পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়ক পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে।
শরীফপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জুনাব আলী জানান, মঙ্গলবার রাতে আমলা বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন মনু প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙন শুরু হলে গ্রামবাসী ও বিজিবি সদস্যরা বালুর বস্তা দিয়ে সেই বাঁধ রক্ষা করেন। কিন্তু গভীর রাতে বাঘজুর ও তেলিবিল এলাকায় প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি গ্রামে প্রবেশ করে। বাঘজুর, তেলিবিল, চাঁনপুর, খাম্বারঘাট, শরীফপুর, বটতলা, সঞ্জরপুরসহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
এছাড়া টিলাগাঁও ইউনিয়নের বলিয়ারা এবং পৃথিমপাশা ইউনিয়নের শিকড়িয়া, রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়নের ভোলানগর, মিঠিপুর, তেঘরি, ইসলামপুর, মশাজান, খাসপ্রম নগর এলাকায় মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, ঈদের আগে আকস্মিক বন্যায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন তারা। অনেকের বাড়িঘরেও পানি প্রবেশ করেছে। নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে অনেকে। তাদের অভিযোগ কয়েক বছর ধরেই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত ছিল কিন্তু মেরামত করা হয়নি। যার ফলে বার বার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তারা।
কুলাউড়া, রাজনগর ও কমলগঞ্জ কৃষি কার্যালয় প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে, তিন উপজেলায় অন্তত দুইশ হেক্টর আউস ধান বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে।
মৌলভীবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. শাহজাহান জানান, ’আমরা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছি। দ্রুত পানি না কমলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।’
বুধবার বিকেলে মনু নদের পানি বিপদ সীমার ১৭৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে এবং ধলাই নদীর পানি ৫৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
পাানি উন্নয়ন বোর্ড মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টা পানি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে তাদের বরাদ্ধ না থাকায় এই মুহুর্তে আপতকালীন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ সম্ভব হচ্ছেনা। গেলো অর্থ বছর বরাদ্ধ ছাড়া সাড়ে আট কোটি টাকার কাজ করছেন বলে জানান তিনি।
Leave a reply