উৎসব করার মধ্যে নির্মল আনন্দ আছে। কিন্তু সেই আনন্দ যদি ব্যক্তি চরিত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে তা ভবিষ্যতের জন্য নিয়ে আসে খুব খারাপ ফলাফল। তেমনি আজ পুরান ঢাকায় দেখা গেছে ঈদের আনন্দ উৎসব উদযাপনে হাতে খেলনা অস্ত্র নিয়ে ঘুরছে ছোট ছোট শিশুরা। প্রকাশ্যে বিক্রিও করা হচ্ছে বিভিন্ন দামে এসব ভয়ংকর মারণাস্ত্র রেপ্লিকা।
বড় বড় এলএমজি, এসএমজি রেপ্লিকা হাতে এরা ঘুরছে পাড়ায় পাড়ায়। হাতে অস্ত্র, চোখে চশমা পরে একটা নেতিবাচক স্টাইলে উৎসব উদযাপন করছে শিশুরা। এসব শিশুদের সাথে কথা বলে জানা যায়, সালামির টাকা দিয়ে এসব অস্ত্র কিনছে তারা। ছোট ছোট অস্ত্রগুলো একশ থেকে দেড়শ টাকায় আর বড় গুলো আড়াইশ টাকায় কিনেছে। কোথায় পাওয়া যায় এরকম প্রশ্ন করলে, শিশুরা জানায় এসব পুরাতন ঢাকার চকবাজারে পাওয়া যাচ্ছে।
এর আগে ২০১৬ সালে টাঙ্গাইলের সখীপুরে ফাঁসি ফাঁসি খেলা খেলতে গিয়ে হীরা আহমেদ (৯) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিন অঙ্গরাজ্যের মিলওয়াউকে শহরে শিশু খেলনা পিস্তল মনে করে গুলি করায় মায়ের মৃত্যু হয়। আসলে পিস্তলটি ছিলো মায়ের বন্ধুর আসল পিস্তল। এভাবে শিশুরা এসব অস্ত্র নিয়ে খেলতে গিয়ে কখনও ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা।
অন্যদিকে পুরান ঢাকার জেলগেটে ফিল্মি স্টাইলে অস্ত্র হাতে শিশুদের ঘুরে বেড়ানো নিয়ে অনেক অভিভাবক সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, এভাবে প্রকাশ্যে খেলনা অস্ত্র বিক্রি করাটা ঠিক নয়। এতে করে ছোট সময় থেকেই শিশুদের মনে বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে।
শিশুরা কেনো এ রকম করছে এ প্রশ্নে ঢাকা শিশু হাসপাতালের সাইকো-সোশ্যাল কাউন্সিলর জাহান আরা বলেন, শিশুরা সাধারণত কোন রোল মডেলকে ফলো করে যেমন কার্টুনের কোন চরিত্র। এসব চরিত্রে দেখা যায় যে অস্ত্র হাতে মারামারি করছে বা কাউকে উদ্ধার করছে। শিশুরা এসব মডলকে অনুসরণ করে নিজের মধ্যে সেই চরিত্র গড়ে তোলে। এছাড়া আমাদের সংস্কৃতিটা এরকম যে, ছেলে শিশু অস্ত্র হাতে খেলবে মেয়ে শিশু পুতুল নিয়ে। অনেক সময় বাবা-মা উৎসাহ দিয়ে থাকে তুমি এটা নিয়ে খেলো। অপরদিকে শিশুরা ছোট সময়ই তার যে বড় তাকে দেখে এসেছে বড়রা খেলনা পিস্তল নিয়ে খেলতো, এটা দেখে দেখে শিশুদের মধ্যে ইচ্ছে জন্মায় সেও অস্ত্র নিয়ে খেলবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সমাজে যারা নিম্মবিত্ত আসলে সেসব পরিবারের শিশুদের খেলার সামগ্রী স্বল্পতা থাকে। উচ্চবিত্ত পরিবারের শিশুরা বিভিন্ন ধরণের খেলার উপকরণ পেয়ে থাকে। তাই নিম্মবিত্ত পরিবারের শিশুরা এই অস্ত্র বা এধরণের খেলনাই নিয়ে খেলে থাকে। এছাড়া বাবা-মায়ের শিশুর সাথে কম সময় দেয়ার কারণে নিজের মতো সময় কাটাতে গিয়ে এসব খেলনা নিয়ে ব্যস্ত থাকে শিশুরা।
এসব খেলনা নিয়ে খেললে নেতিবাচক কোন প্রভাব পড়বে কিনা এ ব্যাপারে জাহান আরা বলেন, এসব উপকরণ শিশুদের মধ্যে আগ্রাসী মনোভব তৈরি করতে পারে, এসব অস্ত্র শিশুর মধ্যে ডমিনেন্ট আচরণ গড়ে তোলে,তখন শিশুর বিপরীতে গেলে খিট খিটে মেজাজি হয়, দ্রুত কারো সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হয়। বড় হলে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হতে পারে এবং নিজের বিপক্ষে গেলে রাগ করে এসব উপকরণ ব্যবহারের ঝোঁক বাড়তে পারে।
Leave a reply