অপহরণ করে ধর্ষণের ভিডিও ধারণ ও এক পর্যায়ে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয় স্কুলছাত্রীর বই খাতা। ভাইরাল হওয়ার জন্য এই ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া হয় ফেসবুকে। এই পাশবিক নির্যাতনের ঘটনাটি ঘটেছে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত একটি গ্রামে। ঘটনার পর নির্যাতিত ছাত্রীর পিতা সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নেয়ায় শেষ পর্যন্ত আদালতের দারস্থ হন তিনি। তবে এ ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়ার অগ্রগতি এখনও খুব বেশিদূর এগোয়নি, বুক ফুলিয়ে এখনও এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন অভিযুক্ত যুবকও।
আদালতের নির্দেশনার প্রায় চার মাস অতিবাহিত হতে চললেও এখনও তদন্তই শেষ করতে পারেনি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন, পিবিআই। লজ্জায়, অপমানে ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হবার ভয়ে নির্যাতিত স্কুলছাত্রী গৃহবন্দি রেখেছেন নিজেকে। পুরো পরিবারটিই রয়েছে সার্বক্ষণিক আতঙ্কে।
১৫ এপ্রিল সকালে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার পথে স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করেন রাফপুরের খাস ভুলবাড়িয়া গ্রামের সজল ও তার বন্ধু তানভির। ওই দিনই ওই ভুক্তভোগীকে ধর্ষণ করেন সজল শেখ। ধর্ষণের ভিডিও ও ছবি ধারণ করে ফেসবুকেও ছড়িয়ে দেন তিনি। এখানেই শেষ নয়, মেয়েটির ওপর সজল এতটাই ক্ষিপ্ত ছিলেন যে, তার স্কুলব্যাগসহ বইখাতা আগুনে পুড়িয়ে দেয় সে। ভাইরাল হওয়ার জন্য ফেসবুকে ওই ভিডিও আপলোডও করে সে।
পরদিন ১৬ এপ্রিল নির্যাতিত ছাত্রীর পরিবার জানতে পারে, ভুলবাড়িয়া রতনখালিতে ঘেরের একটি ঘরে তাকে আটকে রাখা হয়েছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে সেখানে গিয়ে মেয়েকে বিবস্ত্র অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তবে পালিয়ে যায় সজল। ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর বাবার অভিযোগ, এ ঘটনায় ডুমুরিয়া থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে আদালতের দারস্থ হন তারা।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর মায়ের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে স্কুলছাত্রীকে প্রেমসহ বিভিন্ন কুপ্রস্তাব দিতো সজল শেখ। এতে অতিষ্ঠ হয়ে সম্প্রতি ওই ছাত্রীকে বাধ্য হয়ে নিজ গ্রাম ছেড়ে আরও পাঁচ কিলোমিটার দূরে সাহস ইউনিয়নের মাঠেরহাট এলাকায় নানা বাড়িতে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু সেখানে গিয়েও শেষ রক্ষা হয়নি তার।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনায় অভিযুক্ত হওয়ার পরও প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সজল শেখ। সজলের চাচা শরাফপুর ইউরিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ রবিউল ইসলাম রবিসহ কয়েকজন নিকটাত্মীয় প্রশাসনের প্রভাবশালী হওয়ায় প্রায় চার মাস অতিবাহিত হলেও তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল হয়নি। সুষ্ঠু তদন্ত নিয়েও সংশয় প্রকাশ করছেন এলাকার অনেকেই।
তবে তদন্ত কমকর্তা পিবিআই ইন্সেপেক্টর শহিদুল ইসলাম জানান, অভিযুক্ত সজল শেখ বখাটে যুবক। অভিযোগের বিষয়ে সবকিছু যাচাই বাছাই করতে সময় লাগছে।
ঘটনার বিষয়ে খোঁজ নিতে সজল শেখের বাড়িতে গেলে তার খোঁজ দিতে পারেনি পরিবারের সদস্যরা। এমনকি সজলের ফোন নাম্বার দিতেও অস্বীকৃতি জানান তারা।
/এডব্লিউ
Leave a reply