বেশি ভাড়া চাইলে ওঠে না কেউ, ৪০ বছর ধরে দুই টাকায় পার করছেন যাত্রী

|

ছবি: সংগৃহীত

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি :

দুই টাকার মাঝি কানু মিয়া। কপোতাক্ষ নদে সাতক্ষীরার তালা খেয়াঘাটে ৪০ বছর ধরে নৌকায় যাত্রী পারাপার করছেন তিনি। মূল্য বেড়েছে সবকিছুর। তবে কানু মিয়ার খেয়াপারের মূল্য আর বাড়াতে পারেননি।

কানু মিয়া তালার মাগুরা ইউনিয়নের চরগ্রামের সরকারি জায়গায় বসবাস করছেন। পরিবারে তিন মেয়েসহ সাত সদস্য। এ নিয়ে তার সংসার। অভাবী কানু মিয়া এলাকায় কানু মাঝি নামেই পরিচিত।

এক সময়ে তীব্র খরস্রোত ছিল কপোতাক্ষ নদ। তালার খেয়াঘাটটি ছিল তালা সদর থেকে মাগুরা, জালালপুর, খেশরাসহ অন্যান্যস্থানে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। তবে খেয়াখাট থেকে অদূরে ব্রিজ নির্মাণ হওয়ার পর কপোতাক্ষে স্রোতে ভাটা পড়ে। কপোতাক্ষ নদ পরিণত হতে থাকে মরা খালে।

তালা সদরের বাসিন্দা ইমরান হোসেন জানান, খরস্রোতা কপোতাক্ষ এখন মরা খাল। খেয়াঘাটটি এখন স্মৃতি হয়ে আছে। কিছু মানুষ দৈনিক এখান থেকে পারাপর হয়। কানু মাছি তাদের পার করেন। সেজন্য তিনি নেন প্রতিজন মাত্র দুই টাকা।

তালা খেয়াঘাটের মাঝি কানু মিয়া জানান, ৪০ বছর ধরে মাঝি পেশায় রয়েছি। পৈতৃক পেশা বদলাতে পারিনি। এ ছাড়া আমি অন্য কাজও করতে পারি না। প্রতিজন যাত্রী পার করতে পারিশ্রমিক হয় দুই টাকা। এভাবে দৈনিক ১২০-১৫০ টাকা রোজগার হয়। এখন বাজারে জিনিসপত্রের অনেক দাম এসে সংসার চলে না। ধারদেনা করে সংসার চালাচ্ছি, ঋণগ্রস্থও হয়ে পড়েছি।

তিনি বলেন, সবকিছুর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে আমার পারিশ্রমিক বৃদ্ধি পায়নি। পারাপারের মূল্য যদি বৃদ্ধি করি তাহলে মানুষ আর আমার নৌকাতে উঠতে চায় না। তখন বিকল্প পথে যাতায়াত করে। তাই বাধ্য হয়ে পারিশ্রমিক দুই টাকায় রাখতে হয়েছে। দশ বছর আগেও দুই টাকা নিয়েছি এখনো সেই দুই টাকা।

তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস জানান, খেয়াঘাট ইজারার সময়ে মাঝিরা প্রথম সারিতে আবেদন করতে পারেন। এটা তাদের জন্য একটা বড় সুযোগ। তাছাড়া সময়ের সাথে তালমিলিয়ে তাদেরও মূল্যবৃদ্ধি করা প্রয়োজন। যাত্রীদেরও উপলব্ধি করা উচিত সামান্য দুই টাকাতে সংসার কীভাবে চলবে মাঝির। এ ছাড়া আমাদের কাছে আবেদন করলে সহায়তা করে তাকে বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।

/এনএএস


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply