আখাউড়া প্রতিনিধি:
এসএসসি পরীক্ষার্থী মো.মাহিদুল হোসাইন খান মিরাজ গতকাল দুপুরেও বাবার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছে। কিন্তু সন্ধ্যায় হঠাৎ বাবার মৃত্যুতে আকাশ ভেঙে পড়ে তার মাথায়। বাড়িতে বাবার লাশ, চারদিকে স্বজনদের আহাজারি! অনিশ্চিত হয়ে পড়ে পরীক্ষায় অংশ নেওয়া। তবে শেষ পর্যন্ত চোখের জল মুছতে মুছতে পরীক্ষার হলে গিয়েছে মিরাজ। কেন্দ্রে তাকে সান্ত্বনা দিয়েছেন পর্যবেক্ষকসহ অন্যরা।
মো. মাহিদুল হোসাইন খান মিরাজ আখাউড়া পৌরশহরের দেবগ্রাম দক্ষিণপাড়া গ্রামের মোতাহার হোসেন খান হাসান ছেলে। সে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্নদা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) ছিল গণিত পরীক্ষা। মিরাজের বাবা সদ্য প্রয়াত মোতাহার হোসেন খান হাসান (৫২) আখাউড়া পৌরশহরের কলেজ পাড়ার গ্রিন ভ্যালি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ছিলেন।
এলাকাবাসী ও মিরাজের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যায় স্ট্রোকজনিত কারণে মিরাজের বাবা মোতাহার হোসেন খান হাসান মারা যান। এমন অবস্থায় মিরাজ তার এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদরের গভর্নমেন্ট মডেল গার্লস হাই স্কুল কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে যায়। পরীক্ষার হলেই সে কান্নায় ভেঙে পড়ে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে মিরাজ বলে, বাবা আর নেই! বাবা আর কখনোই আমাকে আদর করে ডাকবে না! এটা আমি মানতে পারছি না! বাবার স্বপ্ন ছিল আমি অনেক বড় হব। তাই আমি পরীক্ষা দিতে এসেছি। কিন্তু বাবার এভাবে চলে যাওয়া আমাকে ভীষণ কষ্ট দিচ্ছে। আমি সহ্য করতে পারছি না।
মিরাজ সজল চোখে যখন পরীক্ষার হলে ঢুকছিল তখন তার বন্ধুদের চোখেও জল। দৃশ্যটি ছুঁয়ে গেছে শিক্ষকদেরও। মিরাজের শিক্ষকরা জানান, মিরাজ মেধাবী ছাত্র। পড়াশোনায়ও ভীষণ মনযোগী সে।
হলের কক্ষ পরিদর্শক মো. আলি আহমদ বলেন, বাবার লাশ বাড়িতে রেখে মনে কষ্ট চেপে সে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। আল্লাহ তাকে ধৈর্য ধারণের ক্ষমতা দিন। অনেক বড় হোক মিরাজ।
মিরাজের মামা মো. আরিফুল ইসলাম জানান, মিরাজকে সকালে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যান তিনিই। বাড়িতে মিরাজের বাবার লাশ অপেক্ষা করছে। আসরের নামাজের পর স্থানীয় একটি স্কুলের মাঠে তার জানাজা।
/এডব্লিউ
Leave a reply