বৈশ্বিক মন্দার শঙ্কা: টালমাটাল পরিস্থিতিতে সতর্ক অবস্থায় বাংলাদেশ

|

রিমন রহমান:

২০০৯ সালের পর আবারও মন্দার কবলে বিশ্ব অর্থনীতি। বিভিন্ন সূচক জানান দিচ্ছে, আগামী বছর অর্থাৎ ২০২৩ সাল হবে মন্দার বছর। ইতোমধ্যেই বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি নেতিবাচক ধারায় চলছে। নিয়ন্ত্রণহীন মূল্যস্ফীতি, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার বৃদ্ধি এবং প্রবৃদ্ধির নিম্নমুখী প্রবণতা এখন স্পষ্ট। বৈশ্বিক টালমাটাল অবস্থায় সতর্ক বাংলাদেশ।

রফতানি খাত, রিজার্ভ ও অভ্যন্তরীণ যোগান ঠিক রাখা নিয়েই এখন দুশ্চিন্তা। বলা হচ্ছে, টিকে থাকতে কৌশল হাতে নেয়ার বিকল্প নেই। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান মনে করেন, পরিস্থিতি মোকাবেলায় সকলকেই এগিয়ে আসতে হবে।

মূলত, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, লাগামহীন মূল্যস্ফীতি, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহারে উলম্ফন— বিশ্ব অর্থনীতিকে টালমাটাল করেছে। সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক বলছে, বিশ্বমন্দা আসন্ন। জাতিসংঘের সংস্থা আঙ্কটার্ডও চলতি মাসের শুরুতে দেয়া প্রতিবেদনে মন্দার ঝুঁকি উড়িয়ে দেয়নি। আর আইএমএফ মনে করে, খাদ্য ও জ্বালানির ক্রমাগত দামবৃদ্ধি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছে মূল্যস্ফীতির আগুন।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের পরামর্শক ড. জাহিদ হোসেন বলেন, প্রবৃদ্ধি কমবে, যা ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। এই বছর যা ছিল, তার চেয়েও নিচে নেমে যাওয়ার একটা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশ্বব্যাপী যদি আয় কমে যায়, সেটাকে বলা হয় বিশ্বমন্দা।

১৯৩০ সাল থেকে শুরু এ পর্যন্ত পাঁচবার অর্থনৈতিক মন্দা দেখেছে বিশ্ব। সবশেষ ২০০৯ সালে ব্যাংক খাত ধসে মন্দা তৈরি করে যুক্তরাষ্ট্র। প্রশ্ন হচ্ছে, কী কারণে আসছে ২০২৩-এর মন্দা?

ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বিশ্বে সুদের হার বাড়ানো এবং মূল্যস্ফীতির বৃদ্ধি— দুটোই চাহিদাকে কমিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে জ্বালানির সংকট, বৈরী আবহাওয়া ও সরবরাহ চেইনের ঝামেলাগুলোর কারণে যোগানটা বাড়ানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

বিশ্ব মন্দার কবলে পড়লে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক রফতানি। বৈশ্বিক কারণে মূল্যস্ফীতির চাপেও বাংলাদেশ। দামের আগুন থেকে পরিত্রাণ পেতে ইতোমধ্যে সুদহার বাড়িয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

ড. জাহিদ হোসেন বলেন, মূল্যস্ফীতি অনেক উপরে উঠে গেছে। মূল্যস্ফীতিকে এখন বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। যেসব দেশে মন্দাটা বেশি হবে, সেসব দেশেই আমাদের বাজারটা বড়। সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে রয়েছে ইউরোপ। আমেরিকা এখনও ঠিক মন্দা ঘোষিত হয়নি। একক বাজারে হিসেবেও দেশটি আমাদের বড় বাজার।

এদিকে পরিকল্পনামন্ত্রী মনে করেন, বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতার বিকল্প নেই। এম এ মান্নান বলেন, খুব অনিশ্চিত পরিবেশের মধ্যে আমরা আছি। স্থিতিশীল পরিস্থিতি যদি দেশ ও বাইরে দুই জায়গায় না হয়; আমাদের প্রবৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতির মতো অন্যান্য বিষয়গুলোতে অতি দ্রুত ভালো সংবাদ আমি দেখছি না।

পরিস্থিতি মোকাবেলায় কৃচ্ছতা সাধনের পথে হাঁটছে সরকার। মূল্যস্ফীতির হাত থেকে রক্ষায় নিম্নআয়ের মানুষদের ভর্তুকি দামে দেয়া হচ্ছে পণ্য।

এ বিষয়ে ড. জাহিদ হোসেন বলেন, সরবরাহ চেইনে জ্বালানির যে সংকট সেটা যদি আমরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারি এবং নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা গেলে কৃচ্ছতার ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply