১৩ জেলায় ২২ জনের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। গাছ ভেঙে পড়ে, নৌকাডুবি এবং জোয়ারের পানিতে ডুবে নিহত হন তারা। সোমবার (২৪ অক্টোবর) মধ্যরাতে ভোলা উপকূল দিয়ে ঢুকে সিলেট অঞ্চল হয়ে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে সিত্রাং, রেখে যায় ক্ষতচিহ্ন। ফসল আর ঘরবাড়ি বিধ্বস্তের পাশাপাশি, খুঁটি উপড়ে পড়ায় বিচ্ছিন্ন হয় বিদ্যুৎ সংযোগ। জলোচ্ছ্বাস ও টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় বিভিন্ন জেলার নিম্নাঞ্চল। আবহাওয়া ভালো হওয়ায় মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) সকালেই আশ্রয়কেন্দ্র থেকে ঘরে ফেরে মানুষ।
সোমবার রাতভর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে উপকূলীয় জনপদ। ৭০-৭৫ কি.মি. বেগে আঘাত হানা ঝড় আর কয়েক ফুট উচ্চতার জলোচ্ছাসে ক্ষত-বিক্ষত হয় অনেক এলাকা। ঘূর্ণিঝড়ে দৃশ্যমান ক্ষয়ক্ষতি বেশি উপকূলীয় জনপদ ভোলায়। জেলার কয়েকশ বাড়িঘর পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হাজারেরও বেশি বসতঘর। ভেঙে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। খুঁটি ভেঙে বিদ্যুতহীন অনেক এলাকা। ঘূর্ণিঝড়ে ভোলা সদর, দৌলতখান, লালমোহন ও চরফ্যাশনে প্রাণ গেছে ৪ জনের। চার উপজেলার নিম্নাঞ্চলের অন্তত ২০টি গ্রাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়। বরগুনার নিম্নাঞ্চলও তলিয়ে যায় জোয়ারের পানিতে। সদর উপজেলার সোনাখালীতে গাছ চাপায় মারা গেছেন একজন।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ভারী বৃষ্টি ও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি উচ্চতার জোয়ারের পানিতে বরিশাল নগরী ও আশেপাশের বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে বলে জানা গেছে। পানি ঢুকে পড়ে বাসাবাড়ি ও দোকানপাটে। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় এসব এলাকার বাসিন্দাদের। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সিত্রাংয়ের প্রভাবে ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে বৃষ্টি হয়েছে ৩২৪ মিলিমিটার।
এদিকে, কুমিল্লায় ঝড়ে ভেঙে পড়ে বহু গাছপালা। লাঙ্গলকোটে গাছ ভেঙে পড়ে বসতঘর চাপায় মারা গেছেন একই পরিবারের ৩ জন। লক্ষ্মীপুরে বিভিন্ন স্থানে ভেঙেছে বেড়িবাঁধ। প্লাবিত বসতবাড়ি-রাস্তাঘাট। ভেঙেছে বাড়িঘর, বহু গাছপালা। খুঁটি উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে অনেক এলাকা।
নোয়াখালীতেও তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক হাজার বাড়িঘর। বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। সুবর্ণচরে গাছের নিচে চাপা পড়ে প্রাণ গেছে এক শিশুর। হাতিয়া, কোম্পানিগঞ্জ ও সুবর্ণচরের বিস্তীর্ণ এলাকা তলিয়ে যায় জোয়ারের পানিতে।
মুন্সিগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, গাজীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নড়াইলে বসতঘর ভেঙে ও গাছচাপায় মারা গেছেন ৮ জন। সিরাজগঞ্জ, পটুয়াখালী ও ঝালকাঠিতে নৌকাডুবি ও জোয়ারের পানিতে ডুবে প্রাণ গেছে ৪ জনের। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বহু কাঁচা বাড়িঘর।
জোয়ারের পানিতে ডুবেছে কক্সবাজারের নিম্নাঞ্চল। বসতঘরে ঢুকে পড়েছে পানি। আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরে সেই পানি অপসারণে ব্যস্ত এখন অনেকেই। আর, সেন্টমার্টিনের ডুবে যাওয়া এলাকাগুলো থেকে নামতে শুরু করেছে পানি। এরই মধ্যে আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরেছেন উপকূলের মানুষ। মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম শুরু হয়েছে, স্বাভাবিক হয়েছে সারাদেশের নৌ চলাচলও।
/এসএইচ
Leave a reply