সরবরাহ ঘাটতিতে অস্থির চিনির বাজার

|

খোলা চিনি। ফাইল ছবি।

রিমন রহমান:

চাইলেই মিলছে না ক্রেতার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য চিনি। মিল পর্যায় থেকে কমিয়ে দেয়া হয়েছে সরবরাহ, তাই দিন দিন তীব্র হচ্ছে সংকট। সরবরাহ বাড়াতে এ পর্যন্ত যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তার কিছুই কাজে আসেনি।
এছাড়া, দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পরও তা কার্যকর হচ্ছে না। নেপথ্যের সিন্ডিকেট এখনও অধরা রয়েছে। এমন অবস্থায় চিনির মজুদ পরিস্থিতি জানার উদ্যোগ নিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর।

কথা হয় রাজধানীর হাতিরপুল বাজারের এক দোকানদারের সঙ্গে। জানালেন, এর আগে কখনোই খুব অল্প পরিমাণে মজুদ রেখে চিনি বিক্রি করেননি। বললেন, উপায় নেই, ক্রেতা ধরে রাখতেই অল্প করে হলেও চিনি দরকার। কোম্পানিকে অর্ডার দিলে বলে চিনি নাই। বাজারে গেলেও পাই না। বাজারে বস্তা চাইলেও দেয় না। সর্বোচ্চ ৫-১০ কেজি দেবে। এর বেশি দেবে না।

হাতিরপুলের এই দোকানের চিত্র রাজধানীর অলিগলি কিম্বা বাজারগুলোতে। ক্রেতারা ঘুরছেন এ দোকান থেকে ও দোকান; নেই চিনি। কিন্তু চিনি কোথায়? এতোদিন দাম বাড়ছিল, তবে এখন বাজার থেকেও চিনি হাওয়া।

ক্রেতাদের অভিযোগ, সিন্ডিকেট করে চিনি গায়েব করা ফেলা হয়েছে। প্রশ্ন তোলেন, দেশের চিনি যাবে কোথায়? আরেক দোকানদার বললেন, আমরা চিনি ৯৫ টাকা দরে ক্রয় করে চিনি নিয়ে আসি। তাহলে কত টাকায় বিক্রি করবো? কোনো স্লিপও দেয় না। এখন ভোক্তা অধিদফতর আসলে জরিমানা করবে।

আমদানি ও উৎপাদন ব্যয় বিশ্লেষণ করে চিনির দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। কিন্তু সেই দামে কোথাও চিনি বিক্রি হচ্ছে না। পাইকারি বাজারেও চিনির জন্য হা-হুতাশ।

মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক গোলাম মওলা বলেন, সরকার নির্ধারিত দামে মিল মালিকরা চিনি সরবরাহ করছেন না। তাদের অজুহাত হলো গ্যাসের সংকট রয়েছে। বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনে ১৮টি মিল রয়েছে। তারা যে পরিমাণ চিনি উৎপাদন করে একদিনেও এর চাহিদা নেই। হাতেগোনা ৫-৭ জন এ পণ্য আমদানি, উৎপাদন ও বিপণন করেন। তারা যেভাবে চালাবে, পাইকারি ব্যবসায়ীরা সেভাবে চলতে হবে। ভোক্তারা তাদের দারস্থ হবে এবং বিকল্প কোনো পথ নেই।

মিল পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, বিদ্যুৎ সংকটের কারণে ব্যহত হচ্ছে উৎপাদন। তবে, কোন পর্যায়ে চিনি মজুদ হচ্ছে তা খতিয়ে দেখতে চায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। জোড়দার করা হবে বাজার অভিযান।

সংস্থাটির মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, মিল থেকে চিনি ডিস্ট্রিবিউট হওয়ার পরে রিটেইল পর্যায়ের মাঝখানে হয়তো কারসাজির কোনো বিষয় থাকতে পারে। সেজন্য আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। যদি কোথাও এটি মজুদ করা হয়, সেখানে আমরা অভিযান করছি।

দেশে মোট চিনির চাহিদা ১৮ থেকে ২০ লাখ টন। চাহিদার পুরোটাই আমদানি হয় অপরিশোধিত চিনি। পরে স্থানীয় পর্যায়ে হয় পরিশোধন।

/এমএন


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply