আ. লীগ নেতার বাড়ি থেকে বোমা উদ্ধার, ৭ আসামির ৬ জনই বিএনপির নেতাকর্মী

|

স্টাফ করেসপনডেন্ট, নরসিংদী:

নরসিংদীতে গত মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) সাবেক ইউপি সদস্য এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমান হাসানকে তার নিজ বাড়ি থেকে ককটেল, হাতবোমা, গান পাউডার ও বোমা বানানোর সরঞ্জামসহ আটক করে পুলিশ। এই ঘটনার পর বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় ইমান হাসান ছাড়া বাকি যে ৬ জনকে আসামি করা হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার নরসিংদী সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন থানার উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ ইউসুফ আলী খান।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ঘটনাস্থল থেকে ৩টি বিস্ফারক দ্রব্যযুক্ত ককটেল, ৫৪টি ছোট-বড় মার্বেল, ৭৪টি পাথরের টুকরো, ৫টি খালি কৌটা এবং সাদা পলিথিনে মোড়ানো ৫৪০ গ্রাম গান পাউডার উদ্ধার করা হয়।

এজাহার সূত্রে আরও জানা গেছে, পরস্পরের যোগসাজশে অবৈধভাবে সাধারণ জনগণের ক্ষতিসাধন ও আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে বিস্ফোরক দ্রব্য রাখায় তাদের (আসামিদের) বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মামলায় ১ নম্বর আসামি করা হয়েছে ইমান হাসানকে। ২ নম্বর আসামি বিএনপি নেতা আব্দুল কাইয়ুম সরকার। তবে, এজাহারে তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে ‘কাইয়ুম মিয়া’ হিসেবে। এছাড়া এজাহারে কেবল এই ২ জনের ক্ষেত্রেই পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। বাকি ৬ আসামির নাম ও বয়স উল্লেখ করা হলেও পিতার নাম ‘অজ্ঞাত’ লেখা হয়েছে। সবার ঠিকানা লেখা হয়েছে ‘নরসিংদী সদর উপজেলা’।

মামলার আসামি ৬ বিএনপি নেতা-কর্মীর ভাষ্য:

মামলার আসামি ৬ বিএনপি নেতা-কর্মীর ভাষ্য অনুযায়ী খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কেবল ইমান হাসান ছাড়া মামলার বাকি ৭ আসামিই বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এরা হলেন- নরসিংদী জেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী সদস্য জাহেদুল করিম জাহিদ, জেলা যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ, হাজিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও নরসিংদী শহর যুবদলের সদস্যসচিব শামীম সরকার (শামীম), সদর থানা যুবদলের আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির (রাসেল), জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি নজরুল ইসলাম (নজরুল) এবং আলোকবালী ইউনিয়ন শাখা বিএনপির আহ্বায়ক শাহ আলম চৌধুরী।

আলোকবালী ইউনিয়ন শাখা বিএনপির আহ্বায়ক শাহ আলম চৌধুরী বলেন, কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত না থেকেও কেবল মাত্র হয়রানি করতেই পুলিশ আমাদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে।

শহর যুবদলের সদস্যসচিব শামীম সরকার বলেন, আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি থেকে ককটেল, বোমা ও গান পাউডার উদ্ধার করল পুলিশ। আর মামলা হলো আমাদের বিরুদ্ধে। এভাবে আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে মিথ্যা, বানোয়াট ও কাল্পনিক মামলা দায়ের করে চলেছে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে আলোকবালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আসাদুল্লাহর বক্তব্য, প্রতিপক্ষের লোকজন আমাদের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমান হাসানের বাড়িতে পরিত্যাক্ত ককটেল ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম রেখে তাকে ফাঁসিয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি।

যা বলছে পুলিশ:

বিষয়টি নিয়ে পুলিশের বক্তব্য জানার জন্য যোগাযোগ করা হয় নরসিংদী সদর থানার ওসি আবুল হোসেন ভুইয়ার সঙ্গে। কিন্তু প্রসঙ্গটি উত্থাপন করতেই ফোন কেটে দেন তিনি।

তবে, নরসিংদী জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আল আমিন মিয়া বলেন, ঘটনার সঙ্গে পুলিশ যাদের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে তাদের বিরুদ্ধেই মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ বিনা অভিযোগে কারও বিরুদ্ধে মামলা করে না। কে কোন দল করেন, সেটা তাদের বিষয়। তারপরও আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। আর এখন পর্যন্ত এ মামলায় বিএনপির কাউকে গ্রেফতার করার খবর আমার কাছে নেই।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা অভিজিৎ রায় বলেন, গ্রেফতারকৃত ইমান হাসান যেভাবে যাদের নাম বলেছেন, ঘটনার সঙ্গে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে, সে নামগুলোই আমরা মামলায় উল্লেখ করেছি। তারা বিএনপির নেতা-কর্মী কি না তা আমাদের জানা নেই।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply