ফলচাষে কোটিপতি ঝিনাইদহের আক্তারুজ্জামান

|

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি :

পরিবারের অন্য সদস্যদের মোটামুটি সবাই উচ্চ শিক্ষিত হলেও নিজে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে আর এগোননি। উদ্যোক্তাদের সফলতার গল্প শুনে অনুপ্রাণিত হন কৃষিতে। প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেও হয়ে যান কৃষি উদ্যোক্তা। পেয়েছেন দারুণ সফলতাও। তার ফার্মে কর্মসংস্থান হয়েছে বহু মানুষের। বলা হচ্ছে, ঝিনাইদহের কৃষি উদ্যোক্তা আক্তারুজ্জামানের কথা। নানা পথ ঘুরে কৃষিতেই খুঁজে পেয়েছেন নিজেকে। মাত্র ১২ বছরের চেষ্টায় তিনি এখন কোটিপতি।

আক্তারুজ্জামান জানান, চলতি বছর ২০ বিঘা জমিতে লেবু এবং ৩০ বিঘায় ড্রাগন চাষ করেছেন তিনি। এ বছর ইতোমধ্যে ২৫ লাখ টাকার লেবু বিক্রি হয়েছে। এছাড়া বিদেশি ফল ড্রাগন বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ২০ লাখ টাকা। বাগান রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বাদ দিয়েও এতে তার অন্তত ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা লাভ হবে বলে জানান মহেশপুরের বাথানগাছি গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছোট ছেলে আক্তারুজ্জামান।

এই কৃষি উদ্যোক্তা জানান, ২০১০ সালে যুব উন্নয়ন থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার পর গড়ে তোলেন আক্তারুজ্জামান এগ্রো ফার্ম। প্রথম দিকে ১৫ বিঘা জমিতে পেঁপে ও কলা দিয়ে চাষ শুরু করেন। পরে কুল, পেয়ারা, ড্রাগন, ছাতকি কমলা চাষ করেন। বর্তমানে তার বাগানে প্রায় ২৫ জন শ্রমিক দৈনিক মজুরি ভিত্তিতে কাজ করেন।

ড্রাগন চাষ সম্পর্কে তিনি বলেন, ড্রাগন বহুবর্ষজীবী টেকসই ফল। খুঁটি পদ্ধতিতে চারা রোপণ করতে হয়। রোপণের পর ফল আসতে সময় লাগে প্রায় ১৮ মাস। ফল আসা পর্যন্ত চারা প্রতি খরচ প্রায় ১ হাজার টাকা। ফুল আসার ৩০-৩৫ দিনের মাথায় ড্রাগন তোলা যায়। প্রতি চারা থেকে বছরে গড়ে ২৫-৩০ কেজি ড্রাগন উৎপাদন হয়।

নিজের পরিবার সম্পর্কে আক্তারুজ্জামান জানান, ৬ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। বাকি ভাইবোনের সবাই উচ্চশিক্ষিত। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বেশি নেয়া হয়নি শুধু আক্তারুজ্জামানের। ১৯৯৩ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিলেও সংসার বিরাগী হওয়ায় কোনো রকমে তৃতীয় বিভাগে পাশ করেন। এরপর ভাইয়েরা জোর করে ঢাকায় নিয়ে একটি স্কুলের নবম শ্রেণিতে ভর্তি করান। সেখানেও ভালো না লাগায় পালিয়ে ভারতে চলে যান। এরপর অবৈধভাবে ফেরার পথে বিজিবি’র হাতে আটক হয়ে বাড়ি ফেরত আসেন। সেই তিনিই আজ একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা।

মহেশপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাসান আলী জানান, আক্তারুজ্জামানের ফল চাষ পদ্ধতি প্রশংসার দাবি রাখে। বিশেষ করে ফল চাষের রোগ বালাই দমনে তাকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়া কৃষি অফিসের একজন উপ-সহকারী কর্মকর্তা প্রতিদিনই তার বাগান পরিদর্শন করেন। বিদেশি ফল ড্রাগন ও মাল্টা লাভজনক হওয়ায় অনেকে এখন তার কাছ থেকে চারা নিয়ে রোপণ করছে বলেও জানান তিনি।

এএআর/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply