ইনজুরির মিছিলের কারণ ক্লাব ফুটবল নাকি বিশ্বকাপের পরিবর্তিত সময়?

|

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বকাপের সাথে ক্লাব ফুটবলের সূচির দর কষাকষি হয়তো এবারের আগে এতটা তীব্র আকার ধারণ করেনি কখনোই। কাতারের জলবায়ুগত কারণে বিশ্বকাপ আয়োজনের সময় জুন-জুলাই থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে নভেম্বর-ডিসেম্বরে, যখন তুমুল গতিতে চলতে থাকে ক্লাব ফুটবল। এই দুই আয়োজনের ব্যস্ত সূচির খাঁড়ায় পড়ে ইনজুরিতে গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ থেকে ছিটকে গেছেন একের পর এক ফুটবলার। তাই প্রশ্ন উঠেছে অবধারিতভাবেই, এত ফুটবলারের স্বপ্নভঙ্গের দায় কার, ক্লাব ফুটবল নাকি চলমান বিশ্বকাপের সূচি।

পেশাদার ফুটবলাররা অপেক্ষায় থাকেন বিশ্বমঞ্চে নিজেদের মেলে ধরার জন্য। চার বছরে একবার অনুষ্ঠিত হওয়া ফিফা বিশ্বকাপে খেলা ফুটবলারদের এক লালিত সাধের নাম। তাই বিশ্বকাপের বছরে আসর শুরুর আগ মুহূর্তে বেশ সতর্কই থাকতে হয় তাদের। এমনকি অনুশীলনে হালকা চালে পাওয়া কোনো চোটেও ম্যাচের ঠিক আগে শেষ হয়ে যেতে পারে অনেক ফুটবলারের বিশ্বকাপ স্বপ্ন। ভিন্নতা শুধু এবারের আসরে। কাতার বিশ্বকাপ বেশ কিছু নতুন বিষয় সামনে নিয়ে এসেছে।

বিশ্বকাপ শুরুর মাত্র ৫ দিন আগেও চলেছে ইউরোপের সর্বোচ্চ পর্যায়ের লিগগুলো। লিগের এক-তৃতীয়াংশ পেড়িয়ে যাওয়ায় ম্যাচগুলোর গুরুত্বও ছিল বেশি। তাই প্রায় পুরো ম্যাচই খেলতে হয়েছে মেসি-নেইমারদের। ইংলিশ ফুটবলার বেন চিলওয়েল, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ফরাসি ডিফেন্ডার রাফায়েল ভারানে অথবা টটেনহ্যামের দক্ষিণ কোরিয়ার স্ট্রাইকার সন হিউং মিন তিনজনই শেষ মুহূর্তে এসে পড়েছেন ইনজুরির কবলে। বুন্দেসলিগায় বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে খেলা সাদিও মানেও বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গেছেন শেষ সময়ের ইনজুরিতে। তাদের কেউ কেউ আছেন বিশ্বকাপের স্কোয়াডে। তবে সেনেগালের স্বপ্নসারথী মানে খেলতে পারবেন না বিশ্বকাপ। ক্লাবের এই ব্যস্ত সূচির প্রভাব তাই খেলোয়াড়দের বিশ্বকাপ পারফরমেন্সে প্রভাব না রেখেই পারে না।

প্রথমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যে হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ আসর। দেশটির গরমকালের দাবদাহ এড়াতে তাই প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপও সরিয়ে আনা হয়েছে তার জুন-জুলাইয়ের নিয়মিত সময় থেকে। একদিকে বিশ্বকাপের জন্য নিজেদের প্রস্তুতি, আরেকদিকে বড় বড় দলগুলোর শিরোপার দৌড়ে টিকে থাকার মিশন। কে থামাবে ফুটবলারদের উপর দেয়া এই বাড়তি চাপ? লিগগুলোতে বিরতি দিলে অবশ্যই কিছুটা হলেও এই ইনজুরির প্রভাব এড়ানো যেতো। কোভিড কালে মাস খানেক পিছিয়ে লিগের খেলা শুরু করার নজিরও ছিল। কিন্তু সেবার লিগের পাশাপাশি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের কারণে অনেক ফুটবলারই পড়েছিলেন ইনজুরিতে। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। প্রতিটি লিগ এবং সব ক্লাবের ফুটবলারদের বিশ্বকাপের আগে ও পরে খুব দ্রুত খেলা থাকায় একই শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ইপিএলে মাত্র ৬ সপ্তাহের বিরতির পর বক্সিং ডে দিয়ে মাঠে গড়াবে লিগ। মানে বিশ্বকাপ শেষ হবার ৮ দিনের মাথায় ক্রিসমাসের পরপরই আবারও খেলায় ফিরতে হবে ফুটবলারদের। এতো পরিমাণে খেলা থাকার পর একজন ফুটবলারের দ্রুত রিকভারি করার সময় খুবই কম। ইনজুরির শঙ্কাটাও তাই থেকে যায় অনেক বেশি। বিশ্বকাপে অনেক ভালো দলই নিজেদের সর্বোচ্চটা দিতে পারবে কি না তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ।

এরই মধ্যে কম শক্তির দেশগুলো সাফল্য তুলে হতাশ করছে শিরোপার লক্ষ্যে থাকা দলগুলোকে। একদিক চিন্তা করলে এমন ফলাফলগুলো জমজমাট করে দেবে এবারের বিশ্বকাপকে। কিন্তু অপর দিকে, ভালো দলগুলোর প্রতি অন্যায়ও করা হবে। আর ইনজুরিতে বিশ্বকাপ স্বপ্ন শেষ হওয়া ফুটবলারদের দীর্ঘশ্বাস পড়ে থাকবে ব্যস্ত সূচির আড়ালে।

আরও পড়ুন: গ্যালারির বর্জ্য পরিষ্কার করে ভদ্রতার নজির জাপান দর্শকদের


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply