কাতার বিশ্বকাপে সকল নাটকীয়তা দেখা হয়ে গিয়েছে, এমনটা ভেবে রাখলে তাদের জন্য ছিল মরোক্কান রূপকথার আরেক অধ্যায়। ৩য় কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালকে ১-০ গোলে হারিয়ে প্রথম কোনো আফ্রিকান দেশ হিসেবে সেমিফাইনালে উঠলো মরক্কো। আর খালি হাতেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলেন পর্তুগিজ মহাতারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
কোয়ার্টার ফাইনালে ৪র্থ আফ্রিকান দেশ হিসেবে মাঠে নামে মরক্কো। সাথে প্রথম বারের মতো শেষ চারে খেলার স্বপ্নের হাতছানি। মরক্কোর কাছে স্বপ্নের মতো কাটছে কাতার বিশ্বকাপ। কোয়ার্টার ফাইনালে এসেও দেখা গেলো তাদের চমক। আত্তিয়াত আল্লাহের ক্রস থেকে ইউসেফ এন-নেসাইরির দুর্দান্ত হেডে পর্তুগালকে চমকে দিয়ে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় মরক্কো। তারপর দুর্দান্ত জমাট রক্ষণের পরিচত আরও একবার দিয়ে পর্তুগালকে খাল হাতেই বিদায় করলো হাকিম-হাকিমি-আম্রাবাতদের দল।
কাতারের দোহার আল থুমামা স্টেডিয়ামে ম্যাচের ৪র্থ মিনিটেই আফ্রিকান দেশটির রক্ষণে হামলে পড়ে পর্তুগিজরা। ফ্রি কিক থেকে ফেলিক্সের হেড পরীক্ষা নেয় মরক্কোর গোলরক্ষক বোনোর। তবে আগের ম্যাচের হিরো ইয়াসিনে বোনোকে ফাঁকি দিতে পারেননি পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড।
আগের ম্যাচেও রোনালদোকে ছাড়াই মাঠে নেমেছিল পর্তুগাল। এ ম্যাচেও একই অবস্থা। অবশ্য বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রথমার্ধে দাপট ধরে রাখার চেষ্টা করে ফের্নান্দো সান্তোসের দল। ৩১ মিনিটে অল্পের জন্য হাতছাড়া হয় পর্তুগালের কাঙ্খিত গোল। ফেলিক্সের শট রক্ষণে হাল্কা প্রতিহত হয়ে পোস্ট ঘেঁষে বেড়িয়ে যায়। এরপরই কিছুটা ঘুড়ে দাঁড়ায় আফ্রিকান দেশটি। বেশ কয়েকবার পর্তুগালের রক্ষণে হানা দিলেও ব্যর্থ হয়।
তবে ৪২ মিনিটে ইয়াহিয়ার ক্রস থেকে এন-নেসাইরি’র হেড পর্তুগালের গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে জালে জায়গা করে নিলে ১-০ গোলে লিড নেয় মরক্কো।
প্রথমার্ধেই ম্যাচে ফিরতে পারতো পর্তুগাল। ডি বক্সের বাইরে থেকে ব্রুনো ফার্নান্দেজের অতিমানবীয় শট ক্রসবারে আটকে গেলে হতাশ হতে হয়। শেষ পর্যন্ত ১-০’তে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যায় মরক্কো।
৫১ মিনিটে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে মাঠে নামান সান্তোস। ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোল স্কোরার নেমেই বাড়ান আক্রমণের ধার। স্রোতের বিপরীতে ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগ পায় মরক্কোও। কিন্তু ডি বক্সের বাইরে থেকে নেয়া আজেদিন ওউনাহির শট ছিলো লক্ষ্যভ্রষ্ট।
৬৪ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে বল বানিয়ে জোড়ালো শট নিয়েছিলেন ব্রুনো ফার্নান্দেজ। কিন্তু ক্রসবারের উপর দিয়ে চলে যাওয়ায় হতাশ হতে হয় পর্তুগীজদের। ৬৮ মিনিটে ব্রুনো ফার্নান্দেজের থ্রুতে অল্পের জন্য মাথা ছোয়াতে ব্যর্থ হন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
৮২ মিনিটে রোনালদো সাথে ওয়ান টু ওয়ানে বল বানিয়ে নেন ফেলিক্স। অবশ্য তার সেই শট ঠেকিয়ে ইয়েসিনে বোনো জানান দিলেন, এবারের আসরের অন্যতম গোলরক্ষকের দৌড়ে কেন তিনি রয়েছেন। এবারের আসরে কানাডার বিপক্ষে একটি মাত্র গোল হজম করতে হয়েছিল বোনোকে। তাও সেটি ছিল আত্মঘাতী। এরপর আর কেউই ভাঙতে পারেনি বোনোর দূর্গ।
ম্যাচের যোগ করা সময়ে দারুণ সুযোগ আসে রোনালদোর সামনে। কিন্তু বোনোর রক্ষণ ভাঙ্গতে ব্যর্থ হন তিনিও। ম্যাচে টিকে থাকতে শেষ দিকে কিছুটা শক্তির প্রদর্শন শুরু করে মরক্কো। যার ফলে এক মিনিটের মধ্যে দুই বার হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় ওয়ালিদ ছেদিরাকে।
শেষ কয়েক মিনিটে রোনালদো-ফার্নান্দেজদের আক্রমণ বীর দর্পে আটকে গেছে মরক্কোর রক্ষণভাগ। ফলে রেকর্ড গড়ে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে জায়গা করে নিলো মরক্কো। হতাশা নিয়ে শেষ বারের মতো বিশ্বকাপের মঞ্চ ছেড়ে গেলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
Leave a reply