৬ ভাইবোনকে বঞ্চিত করে পৈত্রিক ভিটা দখল, মামলা দিয়ে ওয়ারিশদের হয়রানি

|

অভিযুক্ত বড়ভাই এ কে এম মহিব উদ্দিন ও তার আইনজীবী জাকারিয়া হাবিব।

আব্দুল্লাহ তুহিন:

ছয় ভাইবোনকে বঞ্চিত করে একাই বাবার রেখে যাওয়া বসতভিটা কব্জাগত করেছেন বড় ভাই। সবার অগোচরে নিজের নামে তৈরি করেছেন দলিল। বাবা-মায়ের স্মৃতিযুক্ত বসতভিটায় বৃদ্ধ ভাইবোনকে ঢুকতে দেয়াতো দূরের কথা উল্টো একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে দখলদার বড়ভাইয়ের বিরুদ্ধে। এলাকার জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে পাড়া-প্রতিবেশীর বিচার ফয়সালাও মানতে রাজি হননি তিনি।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার নদীপাড়ের ছায়াসুনিবিড় ছোট্ট ‘দারোগা বাড়ি’। বাবার মৃত্যুর পর ২৫ শতাংশের সেমিপাকা টিনশেড বাড়িটিই পরিণত পরিবারের মিলনকেন্দ্রে। কর্মব্যস্ত ভাইবোনের সবাই যে যখন সময় পান, একটু প্রশান্তির খোঁজে ছুটে আসেন বাবা-মায়ের রেখে যাওয়া স্মৃতি বিজড়িত বাড়িতে। তবে বিপত্তি বাধে সবাই মিলে এটিকে ‘বাংলো বাড়ি’ করার উদ্যোগ নিতে গেলে। বড়ভাই এ কে এম মহিব উদ্দিন দাবি করেন, বসতভিটা পুরোটাই তার নামে। এতে অন্য কারো অধিকার নেই।

ভুক্তভোগী ওয়ারিশরা জানান, ‘মোসলে উদ্দিন ভিলা’ নাম দিয়ে বাংলো তৈরির উদ্যেগ নেন ৬ ভাইবোন। কিন্তু বাধা দেন বড়ভাই মহিব উদ্দিন। বাবার নামের সাইনবোর্ড নামিয়ে, তিনি সাটিয়ে দেন নিজের নাম। অন্য ভাইবোনেরা নিজেদের অংশ বুঝে চাইলে মহিব উদ্দিন নিজের উকিল জামাতার সহায়তায় একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন তাদের।

ভুক্তভোগীদের দুই বোন অভিযোগ করে বলেন, আমাদের ৪ বোনেরই ওয়ারিশনামায় নাম আছে এবং প্রত্যেকেরই সিগনেচার আছে। কে কতটুকু পাবে তাও ম্যাপের মাধ্যমে উল্লেখ করা আছে। কিন্তু কথায় কথায় তারা বলেন, বাবার তো অনেক জমি ছিল; ওগুলো উদ্ধার করে আপনারা নিয়ে নেন। আমরা এটা নিয়ে নিছি। এটা তো কথা হতে পারে না। এছাড়া, আমাদের পক্ষে কেউ কথা বলতে গেলেই তার বিরুদ্ধেও মামলার হুমকি দেয় তারা।

ভুক্তভোগী ভাইয়েরা বলেন, আমাদের বড়ভাইয়ের জন্য দুঃখ লাগছে যে, তার জামাই বাইরে থেকে এসে আমাদের বাবার নাম খুলে ফেলেছে একধিকবার। আর তিনি সন্তান হয়ে তিনি সেটা কীভাবে সহ্য করছেন?

সুপরিচিত দারোগা বাড়ির ভাই-বোনদের বঞ্চিত করার ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয় পুরো এলাকায়। সমস্যা সমাধানে স্থানীয় প্রশাসনসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা দফায় দফায় বৈঠকে বসেন। দীর্ঘ আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয় ওয়ারিশ অনুযায়ী বণ্টন পদ্ধতিতে জায়গার সমান অধিকার পাবেন ভাইবোনের সবাই। কিন্তু এতো কিছুর পরও বড়ভাই ও তার জামাতার দাবি, সালিশ-বৈঠকে নয়, ফয়সালা হতে হবে আদালতের মাধ্যমে।

এ ঘটনায় রাতইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনজুরুর ইসলাম আঞ্জু বলেন, যেহেতু অন্য ওয়ারিশরা দাবি করছে, তাই আইনগতভাবে জমি ছেড়ে দিতে হবে। আর না হলে তাদের বুঝিয়ে নিতে হবে। তাদের অনেক বুঝিয়েছি, এটা মীমাংসা করে নেন।

সালিশ কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খান আকরামুজ্জামান বলেন, আমরা যে কাগজপত্র দেখেছি তাতে মুন্না সাহেব, মনসুর সাহেব এবং তার বোনরা সবাই ভাগ পাবেন। উনারা কোর্টে মামলা-মোকদ্দমা করেছেন, সেই কথায় বারবার তোলেন। গ্রাম্য সালিশে আমরা শান্তির জন্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু একটা লোকের জন্য এই অশান্তি বিরাজ করছে।

অভিযুক্ত বড়ভাই মহিব উদ্দিনের জামাতা আইনজীবী জাকারিয়া হাবিব বলেন, পিতার ওয়ারিশ হিসেবে আমার শ্বশুর যতটুকু সম্পত্তি পাবে, আমরা ততটুকুই দাবি করি। এর বেশি এক ফোঁটাও আমরা দাবি করি না। কিন্তু উনাদের দাবি হচ্ছে, যে পাঁচ দাগের মধ্যে জমি আছে ওখান থেকে টুকরো-টুকরো করে নিতে হবে। তাহলে আমরা কি পাঁচটা বর্ডার বসাবো? পাঁচ জনকে পাঁচ জায়গায় দেব নাকি এক জায়গায় থাকবো?

এ ঘটনায় অভিযুক্ত মহিব উদ্দিনকে প্রশ্ন করলে তিনি কোনো উত্তর দেন নি।

এএআর/


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply