মাহফুজ মিশু, ঝাড়খন্ড থেকে ফিরে:
ভারতের ঝাড়খন্ড থেকে ২৬ মার্চ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আর জুনের মধ্যে তা দাঁড়াবে ১৫০০ মেগাওয়াটে। আদানি গ্রুপের মালিকানাধীন গোড্ডা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়বে কমপক্ষে ১৭ টাকা।
সরকার বলছে, কয়লার বাজার ঊর্ধ্বমূখী হওয়ায় উৎপাদন খরচ বেশি। আর আদানি গ্রুপ বলছে, ভারতীয় কয়লা থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ বিদেশে রফতানি করা যায় না। আমদানি করা কয়লার কারণে দর একটু বেশি হলেও তা প্রতিযোগিতামূলক বলে দাবি তাদের। এই কেন্দ্রটি ভারতের জাতীয় গ্রিডের সাথে সংযুক্ত না হওয়ায় সারাবছরই সেখান থেকে বিদ্যুৎ পাবে বাংলাদেশ।
ঝাড়খন্ডে আদানির এই বিদ্যৎকেন্দ্রে ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার প্রথম ইউনিটটির নির্মাণ কাজ এখন শেষের পথে। সমান ক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিটটির কাজও চলছে জোরেশোরে, লক্ষ্য মার্চের মধ্যে শেষ করা।
আদানি পাওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনিল সারদানা বলেন, আমরা এখন উৎপাদনে আসার জন্য অপেক্ষা করছি। আর তা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ দিন ২৬-এ মার্চের আগে হবে।
চুক্তির সময় আদানির প্রতি ইউনিটের বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ ধরা হয়েছিল ৮ টাকার মতো। কিন্তু কয়লার দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন তা পড়ছে দ্বিগুণেরও বেশি। দেশটির আইন অনুযায়ী রফতানির লক্ষ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশীয় কয়লা ব্যবহারে নিষেধ রয়েছে। তাই বেশি দামে অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা কয়লার ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে আদানি পাওয়ারকে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আমরা যখন মূল্য নির্ধারণ করেছিলাম, তখন কয়লার দাম অর্ধেক ছিল। এখন যেহেতু কয়লার দাম বেশি, তাই বিদ্যুতের দামও বেশি পড়ছে। কয়লার দাম পড়ে গেলে বিদ্যুতের দামও কমে যাবে। এটি কয়লার দামের ওপর নির্ভর করে। কয়লাভিত্তিক যেকোনো বিদ্যুৎকেন্দ্রে একই অবস্থা।
ঝাড়খন্ডের এই বিদ্যুৎ আনতে তৈরি হচ্ছে ২৪৫ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন। এর ৯৫ কিলোমিটার ভারতের অংশে, বাকিটা বাংলাদেশে; সেই লাইন তৈরিও প্রায় শেষ। এর নির্মাণ খরচও ধরা হয়েছে বিদ্যুতের দামে। ঝাড়খন্ডের গোড্ডা থেকে চাপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর হয়ে বগুড়ায় পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির উপকেন্দ্রে আসবে এই বিদ্যুৎ।
নসরুল হামিদ বলেন, সঞ্চালন লাইন এখন মোটামুটি প্রায় শেষ পর্যায়ে। ওদের বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরির কাজও শেষ পর্যায়ে। যে সঞ্চালন লাইন তৈরি হয়েছে তা সরাসরি বাংলাদেশে যাচ্ছে। ভারতের গ্রিড থেকে নিচ্ছি না। এই সঞ্চালন লাইন সরাসরি আমাদের গ্রিডের সাথে সংযুক্ত হবে।
নিজস্ব জমি ও নির্মাণ খরচ না থাকায় আদানির এই কেন্দ্র নিয়ে সন্তুষ্ট বিদ্যুৎ বিভাগ। ভারত থেকে এখন ১১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করছে সরকার।
এদিকে, চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা আর জ্বালানি সংকটের মধ্যে বাংলাদেশে দরজায় কড়া নাড়ছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ভোটের বছরে বিদ্যুৎ নিয়ে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হোক, তা চায় না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
/এমএন
Leave a reply