চলচ্চিত্র জগতে সাম্প্রতিক সময়ে এমন হইচই আর কোনো তারকাকে নিয়ে আগে বোধহয় হয়নি। ২০২০ সালের ১৪ জুন গোটা উপমহাদেশ থমকে গিয়েছিল বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু সংবাদে। ভক্ত থেকে সহকর্মী-সবারই মেনে নিতে কষ্ট হয়েছিল তার মৃত্যুর খবর। বেঁচে থাকলে আজ ৩৭ বছরে পা রাখতেন অকাল প্রয়াত এ তারকা।
হৃত্বিক কিংবা শাহরুখের মতো সুপারস্টারদের পেছনে ব্যাকগ্রাউন্ড ড্যান্সার হিসেবে যাত্রা শুরু হলেও, কয়েক বছরের মধ্যেই স্টার হিসেবে মঞ্চ কাঁপিয়েছেন সুশান্ত সিং রাজপুত। তার জীবনের গল্প অনেকটা সিনেমার মতোই। পড়াশুনায় বরাবরই ক্লাসের প্রথম সারিতে ছিলেন। বেড়ে ওঠেন বিহারের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। ২০০২ সালে মায়ের মৃত্যুর পর পাড়ি জমান দিল্লিতে। দিল্লি কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় গোটা ভারতে সপ্তম স্থান অর্জন করেন সুশান্ত।
ভর্তি হয়েছিলেন দিল্লি টেকনোলজিক্যাল ইউনিভার্সিটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে। তৃতীয় বর্ষে হঠাৎ থিয়েটার নিয়ে আগ্রহ জন্মে। মোটা মোটা বইয়ের ফাঁকে তার অভিনয়ের স্বপ্ন দেখার শুরুটা তখনই। বলিউডে পরিবারতন্ত্র আর স্বজনপ্রীতির জয়জয়কার জেনেও নিজেকে চ্যালেঞ্জ করেন। সব পরীক্ষায় সামনের সারিতে থাকা সুশান্ত হঠাৎই পড়াশোনা ছেড়ে অভিনয় ও নাচের ক্লাসে যোগ দেন।
তার নাচের প্রতিভায় মুগ্ধ হয়ে বিখ্যাত কোরিওগ্রাফার শামক দাভর তাকে কমনওয়েলথ গেমস ও ফিল্মফেয়ার পুরষ্কার অনুষ্ঠানে ব্যাকগ্রাউন্ড ড্যান্সার হিসেবে পারফর্ম করার সুযোগ দেন। এদিকে, মঞ্চে তার অভিনয় দেখে বালাজি টেলিফিল্মসের একজন কাস্টিং ডিরেক্টর মুগ্ধ হন। পরবর্তীতে ‘পবিত্র রিশতা’ টেলি-সিরিয়াল থেকে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন এ অভিনেতা।
২০১৩ সালে ‘কাই পো চে’ দিয়ে বলিউডে তার আত্মপ্রকাশ। শুদ্ধ দেশি রোম্যান্স, পিকে, ডিটেকটিভ ব্যোমকেশ বকশি, কেদারনাথ, ড্রাইভসহ ১৬টি সিনেমায় ছোট-বড় চরিত্রে অভিনয় করেন সুশান্ত। বলিউডের সবচেয়ে ব্যবসাসফল বায়োপিক ‘এমএসডি’তে মূল ভূমিকায় অভিনয় করেন ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির চরিত্রে। সবশেষ তাকে দেখা যায় ২০২০ সালের সিনেমা ‘দিল বেচারা’তে।
ব্যতিক্রম এ অভিনেতা বলিউডে সামনে এগিয়েছেন কেবল প্রতিভার জোরেই। ‘ছিঁচোড়ে’তে যে মানুষটি শিখিয়েছিল ‘আত্মহত্যা কোনো সমাধান না।’ তিনিই নাকি শেষ পর্যন্ত বেছে নিলেন আত্মহননের পথ! মুম্বাইয়ে নিজ ফ্ল্যাটে পাওয়া যায় ৩৪ বছর বয়সী এ তারকার মরদেহ। প্রাথমিক তদন্তেই সুশান্ত আত্মহত্যা করেছেন বলে ঘোষণা করে মুম্বাই পুলিশ। পরে মামলা যায় সিবিআইয়ের হাতে। কিছুদিন আগে এক বিস্ফোরক তথ্য সামনে আসে। যে হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয়েছিল সুশান্তের, সেই কুপার হাসপাতালের মর্গকর্মী রূপকুমার শাহ এর দাবি, সুশান্তকে খুনই করা হয়েছিল। মর্গে সুশান্তের দেহে একাধিক ক্ষতের চিহ্ন দেখেছিলেন বলেও জানান তিনি।
হত্যাই হোক বা আত্মহত্যা, বলিউডে তারকাদের রহস্যময় মৃত্যু নতুন নয়। দিব্যা ভারতী, জিয়া খান ও কিংবদন্তি অভিনেত্রী শ্রীদেবীর মৃত্যু যার উজ্জ্বল উদাহরণ। মৃত্যু শ্বাশ্বত ও চিরন্তন হলেও পছন্দের তারকাদের এমন অকাল অপমৃত্যু মেনে নিতে পারেন না ভক্তরা। সে বিবেচনায় সুশান্তের রহস্যময় মৃত্যু বলিউডের কালো এ অধ্যায়কে দিয়েছে বিশাল এক ধাক্কা। ভক্তরা অপেক্ষায়, একদিন হয়তো সামনে আসবে এসব প্রশ্নের উত্তর।
/এসএইচ
Leave a reply