মাত্র বছরখানেকের ব্যবধানেই আমূল বদলে গেছে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় আসা লক্ষাধিক মানুষের জীবন। একটা সময় আশ্রয়হীন এসব মানুষের কাছে শীত ছিল মূর্তিমান আতঙ্ক। তবে সে জীবন এখন অতীত। অভাব-অনটন ঝেড়ে ফেলে শিক্ষার আলো দিচ্ছে তাদের নতুন দিনের হাতছানি; দেখাচ্ছে উন্নত ভবিষ্যতের স্বপ্ন।
কথায় আছে, মাঘের শীত বাঘের গায়ে। কিন্তু সেই বাঘও যেন হার মানে উত্তরের জনপদের শীতের তীব্রতায়! হাড়কাঁপানো শীত সব বয়সী, সব শ্রেণির মানুষের জন্য আতঙ্ক নিয়ে এলেও সমাজের নিম্নবিত্ত ও ছিন্নমূল মানুষের কাছে এর ভয়াবহতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। তবে এবারের শৈত্যপ্রবাহ ছুঁতে পারেনি হিমালয়ের হিম বাতাসের ছোঁয়া পাওয়া পঞ্চগড় জেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ২ শতক জমি আর আধাপাকা একটি ঘর বদলে দিয়েছে তাদের জীবনের গতিপথ।
বছরখানেক আগেও শাহের বানুর ঠিকানা ছিল রাস্তার ধারের খুপড়ি ঘর। তীব্র শীতে স্বামী-সন্তান নিয়ে তিনি কাটিয়েছেন দুর্বিষহ জীবন। এখন কেটে গেছে সকল জীর্ণতা, অভাব-অনটন। পাকা ঘরে এসেছে উষ্ণতার প্রশান্তি। শাহেরা বানু বলেন, আগে কুঁড়েঘরে খুব শীত লাগতো। এই পাকা বাড়িতে তেমন শীত লাগে না।
মাহানপাড়া, ছিটমহলসহ পঞ্চগড়ের আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রতিটি অবহেলিত মানুষেরই জীবন বদলেছে। শীতের দুঃশ্চিন্তা কাটিয়ে এখন তাদের অনেকেই ঘরের আঙ্গিনায় চাষাবাদ করছেন শীতের সবজি। সন্তানদেরও পাঠাচ্ছেন স্কুলে। পরিবারগুলোতে শুধু স্বচ্ছলতাই ফেরেনি, পড়েছে শিক্ষার আলোও। আশ্রয়ণ প্রকল্পের শিক্ষা কেন্দ্রগুলোতে শিশুদের পাশাপাশি পড়ালেখা করছেন বাবা-মায়েরাও। বয়স্ক এক শিক্ষার্থী জানান, পরিবারের অভাব ছিল বলে লেখাপড়া শিখতে পারেননি। তবে এখন তিনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের শিক্ষা কেন্দ্রে আসছেন, পড়াশোনা করছেন।
উন্নত ভবিষ্যৎ আর স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে, শিক্ষায় পিছিয়ে থাকতে চান না এক সময়ের আশ্রয়হীন এসব মানুষ। শুধু ঘর এবং জমিই নয়। আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রত্যেক বাসিন্দাদের আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলতে এখনো নিরলসভাবে কাজ করে চলছে সরকার। পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের যারা উপকারভোগী, তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। সমবায় সমিতির মাধ্যমে তারা নিজেরা সেখানে সঞ্চয় করছে, সমবায় বিভাগ তাদের সহযোগিতা করছে।
পঞ্চগড়ের চার হাজার ৮৫০টি পরিবারকে জমি ও ঘর দিয়ে গত বছরের ২১ জুলাই সরকার দেশের প্রথম গৃহহীন ও ভূমিহীনমুক্ত জেলা হিসেবে ঘোষণা করে উত্তরের এই জনপদকে।
/এম ই
Leave a reply