তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে আঘাত হানা শক্তিশালী ভূমিকম্পে মৃতের প্রায় ৫ হাজারের কাছাকাছি। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে চলছে উদ্ধার অভিযান। এদিকে, এই ভূমিকম্পে দেশ দুইটিতে প্রাণহানির সংখ্যা ত্রিশ হাজার ছাড়িয়ে যাওয়া শঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। খবর আলজাজিরার।
এই ভূমিকম্পটি কেন এতো ভয়াবহ?
বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুরস্ক-সিরিয়ায় আঘাত হানা ভয়াবহ ভূমিকম্পটি রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। এই মাত্রার কোনো ভূমিকম্পকে সরকারিভাবে ‘গুরুতর’ হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়। ভূমিকম্পের ভয়াবহতার ক্ষেত্রে ফল্ট লাইনের বড় ভূমিকার কথা বলা হচ্ছে। কোনো স্থানে ভূকম্পনের জন্য ফল্ট লাইনের বড় ভূমিকা রয়েছে। ভূত্বকের উপরিভাগের বিশাল খণ্ডকে টেকটোনিক প্লেট বলা হয়। আর দুটি টেকটোনিক প্লেটের মাঝে থাকা ফাটলকে ফল্ট লাইন বলা হয়। ভূমিকম্প সাধারণত এই ফল্ট লাইনের আশপাশে হয়ে থাকে। গতকালের ভূমিকম্পে তুরস্কের প্রায় ১০০ কিলোমিটার ফল্ট লাইন ভেঙে গেছে। এ কারণেই সৃষ্ট ভূমিকম্পটি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আর এই ফল্টের কাছাকাছি থাকা ভবনগুলো বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।
ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ইনস্টিটিউট ফর রিস্ক অ্যান্ড ডিজাস্টার রিডাকশনের প্রধান অধ্যাপক জোয়ানা ফউর ওয়াকার বলেন, এ রকম প্রাণঘাতী ভূমিকম্প গত ১০ বছরে দুটি ও তার আগের ১০ বছরে চারটি হয়েছে।
তবে শুধু কম্পনের কারণেই এই ক্ষয়ক্ষতি হয় না। দেশটিতে থাকা ভবনগুলো কতটা দৃঢ়, সে ব্যাপারটিও প্রভাব ফেলেছে। তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছে ভোরে, তখন প্রায় সব মানুষই বাসায় এবং ঘুমে। এ কারণে ভবনধসে অসংখ্য মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা জানিয়েছে, গাজিয়ানতেপ এলাকাটির বেশির ভাগ ভবনই শুধু ইট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, যা খুবই ভঙ্গুর। এই নাজুক ভবন সেখানে বসবাসরত বাসিন্দাদের ভূমিকম্পের আঘাতে আরও ভঙ্গুর করে দিয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অব পোর্টসমাউথের আগ্নেয়গিরি এবং ঝুঁকি যোগাযোগ বিভাগের কারমেন সোলানা বলেন, দক্ষিণ তুরস্ক এবং বিশেষ করে সিরিয়ায় অবকাঠামোগুলো বেশির ভাগই ধসে গেছে। এ কারণে আটকে পড়াদের জীবন বাঁচানো এখন অনেকটাই নির্ভর করছে তাদের প্রতিক্রিয়া ও উদ্ধারকাজের ওপর। জীবিত ব্যক্তিদের উদ্ধারের জন্য পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ৪৮ ঘণ্টা পর বেঁচে যাওয়া মানুষের সংখ্যা অনেক কমে যায়।
যে এলাকায় ভূমিকম্পের উৎপত্তি, সেখানে ২০০ বছরেরও বেশি সময় আগে থেকে ভয়াবহ কোনো ভূমিকম্প হয়নি। কোনো সতর্ক সংকেতও ছিল না। এ কারণে এই অঞ্চলে ভূমিকম্প মোকাবেলা ও উদ্ধার অভিযানে ঘাটতি থেকে যাবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
শক্তিশালী ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ায় আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ। অনেকে এখনো নিখোঁজ। এসব মানুষের বেশির ভাগই ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। উদ্ধার অভিযান চলছে।
প্রায় ৮৪ বছর পর গতকাল সোমবার তুরস্কে আবারও ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এর আগে ১৯৩৯ সালের ডিসেম্বরে তুরস্কের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। ওই সময় ৩০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল।
গতকাল সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে এ ভূমিকম্প হয়। এ ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল সিরিয়া সীমান্তবর্তী তুরস্কের গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে। এরপর আবারও ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
ইউএইচ/
Leave a reply