সুভাষ দত্তের জন্মদিন আজ

|

সুভাষ দত্ত (১৯৩০-২০১২)

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে যে অল্পকজন নির্মাতা স্রোতের বিপরীতে হেঁটে তৈরি করেছেন নিজস্ব পথ, তাদের মধ্যে অন্যতম সুভাষ দত্ত। তার নির্মিত একেকটি সিনেমা প্রজন্মের পর প্রজন্মে দিয়ে যাচ্ছে অনুপ্রেরণা। চার দশকের বেশি সময় ধরে সিনেমায় মিশে ছিলেন তিনি। আজ কিংবদন্তি চলচ্চিত্র পরিচালক সুভাষ দত্তের জন্মদিন।

ষাটের দশকের প্রথমদিকে চলচ্চিত্র জগতে পা রাখেন সুভাষ। প্রথমে অভিনেতা হিসেবে, তারপর পরিচালক। ঢালিউডকে দিয়েছেন কবরী, সুচন্দা, ইলিয়াস কাঞ্চনসহ একঝাঁক তারকা। তবে, শুরুটা তার সিনেমার পোস্টার আঁকা দিয়ে। ১৯৫৬ সালে মুক্তি পাওয়া বাংলাদেশের প্রথম সবাক সিনেমা মুখ ও মুখোশের পোস্টার ডিজাইনার ছিলেন তিনি।

নির্মাতা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার আগেই অভিনয়ে আসেন সুভাষ দত্ত। ১৯৫৯ সালে এহতেশাম পরিচালিত ‘এ দেশ তোমার আমার’ সিনেমায় প্রথমবারের মতো তিনি অভিনয় করেছিলেন। এরপর, মুস্তাফিজের পরিচালনায় ‘হারানো দিন’ সিনেমাতেও অভিনয় করেন এ গুণী ব্যক্তিত্ব।

চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে তার অভিষেক হয় ১৯৬৪ সালে। সিনেমার নাম ‘সুতরাং’। পাকিস্তান, ভারত ও কানাডায় মুক্তি পেয়ে গড়েছিল আয়ের রেকর্ড। এ সিনেমা দিয়েই পর্দায় অভিষেক হয় মিষ্টিকন্যাখ্যাত নায়িকা কবরীর। সিনেমাটি প্রশংসিত হয়েছিল সমালোচক মহলেও। এরপর, একে একে নির্মাণ করেন কাগজের নৌকা, আর্বিভাব, অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী, বসুন্ধরাসহ বেশ কিছু ব্যবসা সফল সিনেমা। শিশুতোষ সিনেমা ‘ডুমুরের ফুল’ তাকে নিয়ে যায় অন্য উচ্চতায়।

নির্মাতা হিসেবে বিখ্যাত হলেও সুভাষ দত্তের অভিনয় জীবনটাও উল্লেখ করার মতো। মঞ্চ নাটকের নিবেদিত ব্যক্তি ছিলেন সুভাষ। অভিনয়ও করেছেন বহু সিনেমায়। তার অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে- ‘রাজধানীর বুকে’, ‘সূর্যস্নান’, ‘ফির মিলেঙ্গে হাম দোনো’, ‘আখেরি স্টেশন’, ‘সোনার কাজল’ সহ অসংখ্য চলচ্চিত্র। 

১৯৭৭ সালে ‘বসুন্ধরা’ সিনেমার জন্য পরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান সুভাষ দত্ত। এ সিনেমাটি সে বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে মোট পাঁচটি বিভাগে সেরা হয়েছিল। ১৯৯৯ সালে সুভাষ দত্তকে একুশে পদকে ভূষিত করে বাংলাদেশ সরকার। এছাড়া তার সিনেমা ফ্রাংকফুর্ট চলচ্চিত্র উৎসব, মস্কো চলচ্চিত্র উৎসব ও নমপেন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেও পুরস্কৃত হয়েছিল।

সুভাষ দত্তের কাছে বাণিজ্যের চেয়ে চলচ্চিত্র ছিল অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তার নির্মিত সিনেমাগুলোতে সে ছাপ স্পষ্ট। মহান এ নির্মাতা-অভিনেতা ২০১২ সালের ১৬ নভেম্বর না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। দেশের চলচ্চিত্র আকাশে উজ্জ্বল তারা হয়ে থাকা এ চলচ্চিত্র নির্মাণের কারিগর ভাস্বর হয়ে থাকবেন আজীবন।

/এসএইচ


সম্পর্কিত আরও পড়ুন




Leave a reply